সিরাজুস সালেকিন : প্রতিদিনের মতো শনিবার সন্ধ্যায় এয়ারপোর্ট রোডের শোভাবর্ধনের কাজ তদারকি করছিলেন ভিনাইল গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর। কাজের ফাঁকে শ্যাওড়া বাস স্ট্যান্ডে ৪-৫ বছরের একটি মেয়ে শিশুকে কাঁদতে দেখেন তিনি। মেয়েটিকে কাছে ডেকে নেন আবেদ। কথা বলে জানতে পারেন তার নাম পিয়া। পথ হারিয়ে ওই জায়গায় এসেছে সে। সে বাবা-মায়ের নাম বলতে পারলেও ঠিকানা বলতে পারে না। শিশুটিকে চিপস কিনে দেন আবেদ।
এরপর তার ছবি তুলে ফেসবুকে নিজের আইডিতে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এয়ারপোর্ট রোড এর সৌন্দর্যবর্ধন কাজ পরিদর্শনকালে ৪-৫ বছরের একটি হারিয়ে যাওয়া ছোট মেয়ে শিশু খুঁজে পেয়েছি। শিশুটির দেয়া তথ্য মতে তার নাম পিয়া। তার বাবার নাম ফারুক, মায়ের নাম ফেরদৌসি এবং বড় ভাইয়ের নাম ফাহাদ। তার বাবা চাকরি করে এবং মা গৃহিণী। সে বাসায় কাউকে কিছু না জানিয়ে তার বাবাকে খুঁজতে বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তার মুখের ভাষা শুনে ধারণা করছি তার দেশের বাড়ি নোয়াখালী। কেউ যদি তার বাবা মায়ের ঠিকানা জেনে থাকেন তাহলে আবেদ মনসুর, সিইও, ভিনাইল গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
এরপর তার মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন তিনি। মুহূর্তেই তার পোস্টটি বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একটি ব্যক্তিগত পেইজ থেকে পোস্ট দিয়ে তা বুস্টও করেন আবেদ। ফেসবুকের পোস্ট দেখে নদ্দা এলাকার এক ব্যক্তি সেখানে মন্তব্য করেন, তার এলাকায় একটি শিশু হারিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় মাইকিংও হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভাটারা থানায় যোগাযোগ করেন আবেদ। পুলিশ শিশুটিকে আবেদের জিম্মায় রাখতে বলেন এবং সকালে তারা খোঁজ নেবেন বলে জানান।
সকালে আবেদ তার অফিসের লোকজনের মাধ্যমে নদ্দা এলাকায় শিশুটির বাবাকে খুঁজে বের করেন। এরপর গতকাল বেলা ১টার দিকে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পিয়াকে বাবার কোলে ফিরিয়ে দেন তিনি। পিয়াকে বাবার কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আবেগে আপ্লুত আবেদ মনসুর।
তিনি বলেন, এটা অন্য রকম এক অনুভূতি। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বারবার সুযোগ পেলে এ স্বাদ পেতে চাই। তিনি জানান, পিয়াকে কাছে পাওয়ার পর তাকে বলেছিলেন, আমি তোমার মামা হই। এরপর চিপস খাওয়ানোয় শিশুটি কান্না থামিয়ে তার সঙ্গে খেলতে থাকে। মায়ায় পড়ে শিশুটিকে নিয়ে বাসায় যান আবেদ। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিল থানায় দিয়ে আসতে। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। তবে পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। বাসায় বাচ্চাদের সঙ্গে পিয়া খেলতে থাকে। পরিবারের সদস্যরাও আদর করে। পিয়াকে ফেরত দেয়ার সময় সবার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন আবেদ।
পিয়ার বাবা ফারুক একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। নদ্দার হারেস রোডে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তিনি জানান, শনিবার দুপুরে বাসায় লাঞ্চের পর অফিসে যাওয়ার পথে পিয়া তার পিছু নেয়। পথিমধ্যে সে বাবাকে হারিয়ে ফেলে। এরপর পথ হারানোর কারণে নদ্দা ওভারব্রিজ পার হয়ে শেওড়া রেলগেট এলাকায় চলে যায়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে দিশাহারা হন ফারুক। শনিবার রাতে ভাটারা থানায় জিডি করেন (জিডি নং-৬৯৩)। এরপর রাতে মাইকিংও করেন।
সন্তানকে ফিরে পেয়ে আবেদ মনসুরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফারুক। ফারুকের ভাষ্য, ঢাকা শহরে এত সহজে হারানো মানুষকে ফিরে পাওয়ার কথা চিন্তা করা যায় না। আর কলিজার টুকরো সন্তানকে ফিরে পেয়ে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন মনে করছেন। এমজমিন
১০ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি