সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০৮:২৯:১৬

বন্ধু ভালো হও, অপেক্ষায় থাকবো: আনিসুল হক

বন্ধু ভালো হও, অপেক্ষায় থাকবো: আনিসুল হক

বন্ধু ভালো হও, অপেক্ষায় থাকবো। আবেদনটি মেয়র আনিসুল হকের কণ্ঠ থেকে ঝরেছে পরম আবেগ আর মমতার মিশেলে।


জীবন সংকটাপন্ন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে কথাগুলো বলেছেন তিনি। পিজি হাসপাতালের সহ্যায় ভালো নেই লাকী আখন্দ। তার জীবন সংকটাপন্ন। এমন খবর পেয়ে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে ছুটে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।


তিনি এসে অচেতন লাকী আখন্দের মাথায় হাত বোলান। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে শরীরের খোঁজ-খবর নেন। এক পর্যায়ে লাকী আখন্দ চোখ মেলেন এবং অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে ওঠেন- আনিস...।


তখনই আনিসুল হক আবেগাপ্লুত হয়ে লাকী আখান্দকে বলেন, ‘বন্ধু ভালো হও, অপেক্ষায় আছি।’ আনিসুল হক তার কথাটি শেষ করতে না করতে ফের অচেতন হয়ে যান লাকী। যেমনটা হচ্ছে রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই। ক্ষনিকের জন্য চোখ মেলে মাঝে মাঝে তিনি কাউকে চিনতেও পারছেন না।


আর এই তথ্যগুলো জানান সেখানে উপস্থিত মিডিয়াকর্মী ও লাকী আখন্দের ঘনিষ্ঠজন এরশাদুল হক টিংকু।
তিনি আরও জানান, রবিবার প্রায় মধ্যরাতে আনিসুল হক হাসপাতালে লাকী আখন্দের পাশে আরও কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। প্রত্যাশা করেন প্রিয় বন্ধুটির ফের চেতনা ফেরার। সেই ফাঁকে লাকী আখন্দের একটি পোট্রেট স্কেচের পাশে লিখে দেন প্রায় একই কথা, ‘বন্ধু ভালো হও। আমরা অপেক্ষায় থাকবো।’


এদিকে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে মিডিয়ায় ছড়িয়েছে লাকী আখন্দের মৃত্যু গুজব। মূলত সেই গুজবের বিষয়ে নিশ্চিত হতেই রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং রাতে মেয়র আনিসুল হকসহ আরও অনেকে।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দের জীবন সংকটাপন্ন। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউ’তে (পিজি হসপিটাল) সেন্টার ফর প্যাল্লিয়েটিভ কেয়ার-এর পরিচালক অধ্যাপক নেযামুদ্দিন আহমেদের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
লাকী আখন্দের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল ৭টা থেকে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ই তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, লাকী আখন্দের শরীরের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। তিনি সঙ্কটে আছেন। এ ক্ষেত্রে লাকী আখন্দের পরিবার, স্বজন, বন্ধু ও ভক্তদের কাছ থেকে দোয়া প্রত্যাশা করেছেন।


গুণী এই সংগীতজ্ঞ অনেক দিন ধরেই মরণব্যাধী ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল তার। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়ে উঠেনি।


অসুস্থতার প্রথম থেকেই লাকী আখন্দ ও তার পরিবার কোনও রকম আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণের বিষয়ে বেশ কঠোর ছিলেন। দেশের শীর্ষ শিল্পীদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে লাকী আখন্দ সেটি গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। গুণী কিংবা অভিমানী এই মানুষটি অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজের চিকিৎসা চালাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এই সংগীতকারের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় ভালোবাসা হিসেবে সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন স্বাচ্ছন্দে।


লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে— ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃঞ্চা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’ ‘লিখতে পারি না কোনও গান, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি।-বাংলা ট্রিবিউন
২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে