বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:১০:১৪

হাওয়া ভবনেই শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা: মুফতি হান্নান

হাওয়া ভবনেই শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা: মুফতি হান্নান

উদিসা ইসলাম: জনসমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা সাজানো হয়েছিল হাওয়া ভবনেই। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পাওয়া যায় কিভাবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা এঁটেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট ও হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশসহ (হুজি) জঙ্গি সংগঠনগুলো। ওই হত্যা-পরিকল্পনার বর্ণনায় বিএনপির বর্তমান সিনিয়ন ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে পরিচিত হাওয়া ভবনের নাম বারবার আসে। মুফতি হান্নান জানিয়েছিল, ২১ আগস্টের হামলার জন্য অন্তত তিন দফায় মিলিত হয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা।

মুফতি হান্নানের বক্তব্য অনুযায়ী, সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা সাজানো হয়েছিল হওয়া ভবনেই। ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট একান্ত গোপনীয় সেই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ অন্তত নয়জন। পরবর্তীতে দফায় দফায় মিটিং করে হামলা নিশ্চিত করা হয় এবং বাবরের তত্ত্বাবধানে গ্রেনেড সরবরাহ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আর বাঁচতে দেওয়া হবে না। তাকে মারতেই হবে।

হান্নানের জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে আলোচনায় বসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভূমি উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজন (মেজর নূর), জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুল ইসলামীর এক নেতা।
মুফতি হান্নান

২১ আগস্টের বোমা হামলায় কোনও বাড়তি সময় নিতে চায়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। হওয়া ভবনের মিটিং এর পরপরই দ্বিতীয় মিটিং হয় বাবরের মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে। এরপরের মিটিং হয়েছিল আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায়। হান্নানের দাবি, সেখানে অন্য জঙ্গি  নেতাদের নিয়ে যাওয়ার পর সালামের ছোট ভাই তাজউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। সে (মুফতি হান্নান) জানায়, ‘আমরা অপেক্ষা করার পরে দুইটা কালো পাজেরো গাড়ি আসে। প্রথম গাড়ি থেকে বাবর ও একজন নামে। দ্বিতীয়টা থেকে তিনজন নামে। তারা বৈঠক করে। এরপর আমরা তাদের সাথে বসি। তিনি যে গ্রেনেডগুলো দিতে চেয়েছিল সেগুলো নিয়ে আসি।’ সেখানে বাবর তাদের কাছে গ্রেনেড হ্যান্ডওভার করে বলে উল্লেখ আছে।

হামলার ঠিক আগের মুহূর্তের কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে হান্নান জানায়, ২১ আগস্ট দুপুরে তারা রামপুরার বাসায় মিলিত হয়। সেখানেই গ্রেনেডগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরপর মুফতি হান্নানসহ ১৫ জন ক্যাডার জনসভার আশপাশে অবস্থান নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলার পর হামলাকারীরা ভিড়ের মধ্যে মিশে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। একটুর জন্য বেঁচে যান জননেত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।

মুফতি হান্নান এর স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও পাওয়া যায় ইউটিউবে। তিনি বলছেন, ‘হাওয়া ভবনের সভায় তারেক রহমান বলেছিলেন, বর্তমানে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। শেখ হাসিনা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দেশকে উশৃঙ্খল এবং নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে আমাদের একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

এসময় মুজাহিদ বললেন, ‘আপনার কথা সত্য, শুধু তাই নয়, ইসলামের বিরুদ্ধেও কাজ করছে। অতএব এটা নিয়ে কাজ করা দরকার। যে অরাজকতা তা রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক মোকাবিলা করতে হবে নচেৎ তাকে এ দেশকে চিরবিদায় দিতে হবে, শেষ করে দিতে হবে।’

জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান বলেছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকে। তাকে প্রথম টার্গেট করা হয় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। পরবর্তীকালে জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আর সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।-বাংলা ট্রিবিউন
১৩ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে