নিউজ ডেস্ক: ষড়যন্ত্রকারীদের চোখে চোখ রেখে সফলতার সঙ্গেই শেষ হয়েছে বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। শান্তির বার্তা নিয়ে যে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত সেই মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল আয়োজন কেন্দ্রে (চারুকলা) বাজল অশান্তির ধ্বনি।
যেখানে গরুর মাংস পরিবেশন নিষিদ্ধ, সেখানেই পরিবেশন করা হলো গরুর তেহারি। এ ঘটনার পর চারুকলার ক্যান্টিনে ভাঙচুরও চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। বিক্ষোভও করেছেন তারা।
চারুকলা অনুষদের ডিন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন উপ-কমিটির আহ্বায়ক নিসার হোসেনও মনে করেন মঙ্গল শোভাযাত্রা ভণ্ডুলের যে ‘ষড়যন্ত্র চলছে’ এটি তারই অংশ।
অন্যদিকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় এনে এমন শাস্তি নিশ্চিত করতে চান, যেটি ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কেউ যাতে আর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর চারুকলার ক্যান্টিনে বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করা হয়। যার মধ্যে ছিল গরুর তেহারি।
চারুকলার নিয়ম অনুযায়ী এই ক্যান্টিনে গরুর মাংস পরিবেশন নিষিদ্ধ। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, এদিন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীর মাঝে তেহারি পরিবেশন করা হয় ক্যান্টিনের পক্ষ থেকে। পরে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে খাবারে গরুর মাংস ছিল। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যান্টিনে ভাঙচুর চালান তারা। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে নববর্ষ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী, চারুকলা অনুষদের ডিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ক্যান্টিন ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, গরুর মাংস পরিবেশন করা যাবে না এটি তিনি জানতেন না।
মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনের নেতৃত্বে থাকা চারুকলার জ্যেষ্ঠতম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক সাগর হোসেন সোহাগ বলেন, চারুকলা অনুষদে গরুর মাংস রান্না সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু ক্যান্টিন ম্যানেজার না কি বিষয়টি জানেই না। এটা কেমন কথা। না জেনে সে ক্যান্টিন পরিচালনা করছে? সে পরিকল্পিতভাবেই এ কাজ করেছে। আমাদের দাবি তাকে ক্যান্টিন থেকে বিতাড়িত করতে হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। চারুকলার ক্যান্টিনের কখনো গরুর মাংস পরিবেশন করা হয় না। কিন্তু তারা এটি কেন করলো সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। এর মধ্যে মনে হচ্ছে একটা দুরভিসন্ধি আছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক আগেই শুনেছি যে, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ভণ্ডুল করার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। মনে হচ্ছে এ ঘটনাটি তারই একটি অংশ। তবে এটি সরাসরি বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা সন্দেহ করছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এম আমজাদ আলী বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি অনেক গভীরের ষড়যন্ত্র। ওই ক্যান্টিন ম্যানেজার (জাকির) বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি নজরুল মাজারের নিরাপত্তাকর্মী। নিরাপত্তা কর্মে দায়িত্ব পালনকালেও প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে তার একাধিক সময় বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলা হয়েছে। তাকে অনেক আগে থেকে নজরে রাখা হয়েছে। এখন সন্দেহ আরো বেড়েছে। বাকিটা তদন্তের পর বলা যাবে।
বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটাতে একটি দুষ্টু চক্রের ষড়যন্ত্র আছে। এটি খতিয়ে দেখা উচিত। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। খুব কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ডিনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১৪ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচ/কেএস