ঢাকা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (পীর সাহেব চরমোনাই) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, আসন্ন রমজান মাস শুরুর (২৭ মে) আগেই ‘গ্রিক মুর্তি’ অপসারণ করা না হলে ঈদের পর সুপ্রিমকোর্ট ঘেরাও করা হবে।
২১ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেছেন তিনি। এ ছাড়া একই দাবিতে আগামী ১৭ রমজান সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছেন চরমোনাই পীর।
চরমোনাই পীর বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং জাতীয় ঈদগাহর পাশে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় সবচেয়ে বড় আঘাত হানা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূর্তি কীভাবে এলো, কোথায় থেকে এলো, কে বসালো তিনি তা জানেন না । শুনেছি প্রধান বিচারপতির একক সিদ্ধান্তে মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। কাদের স্বার্থে বিতর্কিত গ্রিক মূর্তি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হলো। এটা জনতার প্রশ্ন। প্রধান বিচারপতির গ্রিক দেবির প্রতি কোনো ভক্তি বা অনুরাগ থাকলে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার এ পছন্দকে তিনি জাতীয়ভাবে চাপিয়ে দিতে পারেন না। মূর্তি স্থাপন করে তিনি দেশের সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এমন একজন বিতর্কিত ও অবিবেচক বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আসনে থাকতে পারেন না। বিতর্কিত বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ করা উচিত।’
মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আরো বলেছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টান অধ্যুষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের সামনেও সর্বোচ্চ আইনদাতা হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম স্থাপিত আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রিক দেবি লেডি জাস্টিস-এর মূর্তি স্থাপন করে মুসলিম সাংস্কৃতিক চেতনা ধ্বংসের অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
মাটি বা ধাতবের তৈরি মূর্তি ন্যায় বিচারের প্রতীক হতে পারে না। কারণ, মূর্তির বাকশক্তি ও বোধশক্তি নেই, রায় দিতে পারে না। সৃষ্টিকর্তা ও তার নাযিল করা কুরআন হচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রতীক। আল্লাহ ন্যায় বিচারের সকল পদ্ধতি পবিত্র কুরআনে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর আল্লাহর রাসূল (সা.) তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্যই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারকরূপে প্রতিষ্ঠিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে চরমোনাই পীর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে খুশি করার জন্যে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহ ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বসালেন, তারা আগামী নির্বাচনে আপনাকে ভোট দিবে না।’
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক মূর্তি’ সরানোর দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কথা ছিল ইসলামী আন্দোলনের। পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় বায়তুল মোকাররমের সামনে নামাজের পর সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। সমাবেশে সারাদেশ থেকে চরমোনাই পীরের মুরিদ ও নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক মূর্তি’ অপসারণের দাবিতে জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম ও এর আশেপাশের মসজিদে অবস্থান নেয় নেতাকর্মীরা। নামাজ শেষে উত্তর গেটে শুরু হয় পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ। ইসলামী আন্দোলনের এই কর্মসূচির কারণে দুপুর থেকেই দৈনিক বাংলা-পল্টন মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, মাওলানা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের এই সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২১ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস