আল-মামুন, সাভার (ঢাকা): সোহেল রানা একটি আতঙ্কের নাম। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার মানুষের ওঠা-বসা ছিল তার কথায়। যেখানেই যেতেন নেতা-কর্মীরা ঘিরে ধরতেন। মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় দামি গাড়ি নিয়ে ঘুরতেন উন্মাদের মত। আবার যুবলীগের বড় একটি পদেরও মালিক ছিলেন। কিন্তু এখন সবই অতীত।
রাজনীতির মাঠে নিজের সামান্যতম চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কোটি কোটি টাকার সম্পদও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। মোট কথা সোহেল রানার সেই প্রভাব এখন শুধুই অতীত।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। আর ঘটনাটি ঘটে শুধুমাত্র সোহেল রানার স্বেচ্ছাচারিতায়। আগের দিন ফাটল চিহ্নিত হওয়ায় ২৪ এপ্রিল সকালে কাজে যোগ দিতে চাননি রানা প্লাজার ৫টি কারখানার শ্রমিকরা। কিন্তু সোহেল রানার চাপেই তারা কাজে যোগ দিতে বাধ্য হন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে স্বরণকালের ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা।
সোহেল রানার দাম্ভিকতাই তার পতনের মূল কারণ। ভবন ধসের আগের দিন ফাটলের খবর পেয়ে সংবাদ কর্মীরা ছুটে যান রানা প্লাজায়। কিন্তু তিনি ফাটলকে সামান্য ঘটনা উল্লেখ করে সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
স্থানীয় সংবাদ কর্মী আহসান উল্লাহ জানান, সোহেল রানা ছিলেন কুলু খালেকের সন্তান। তেলের ঘানি চালিয়ে সংসার চালাতেন তার বাবা। কষ্টের সংসার দেখেছি আমরা। কিন্তু এক সময় রাজনীতির অন্তরালে উত্থান ঘটে তার। এত সম্পদের মালিক বনে যাওয়া সত্যিই অকল্পনীয়।
সোহেল রানা বাজেয়াপ্ত সম্পদের হিসাব দেখলেই ভ্রু কুচকে যায় যে কারো। নয় তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজাটি ছিল ৬৮ শতাংশ জায়গার উপড়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সাভার বাজার রোডে অবস্থিত ১০ তলা আরো একটি বাণিজ্যিক ভবন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ধামরাইয়ে একটি ইটভাটাসহ আরো প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ ছিল রানার কব্জায়।
তবে রানার সেই অতীত মুছে গেছে সাভার থেকে। ভবন ধসের পরপরই হারিয়েছেন রাজনৈতিক পরিচয়। নেতা-কর্মীরাও আর তাকে মনে রাখেননি। পরিবারের সদস্যরাও হয়েছেন বিতাড়িত। রানার সাভারের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। আত্বীয় স্বজন, স্ত্রী সন্তানরা কোথায় থাকেন সেটিও গোপন রয়েছে।
রানাপ্লাজার পেছনে মজিদপুর এলাকায় রানার ছোট বোনের বাসায় গিয়ওে রোববার কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় গেছেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেনি ওই বাসার ভাড়াটেরা।
রানা পতনের সঙ্গে সাভারের রাজনীতিতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উচ্চ পদে এসেছে পরিবর্তন। একমাত্র রানার দোষ ঢাকতে গিয়ে দলের সভানেত্রীর বিরাগভাজন হতে হয়েছে সাবেক সাংসদ তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদকে। যার ফলে গত নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন থেকেও ছিটকে পড়েন।
তার জায়গায় বর্তমানে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনাভোটে সংসদ সদস্য হয়েছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান। রানা প্লাজা ধসের পর হতাহত শ্রমিকদের সেবা করার পুরস্কার হিসেবে তাকে এই সংসদীয় আসনে মনোনয়নের জন্য বাচাই করেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।-জাগো নিউজ
২৪ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস