ঢাকা : দলের তৃণমূলকে চাঙা করতে ৫১ নেতার নেতৃত্বে সাংগঠনিক টিম গঠন করেছে বিএনপি। এসব টিম সারা দেশে কর্মিসভা ও দলের সাংগঠনিক কাযর্ক্রম জোরদারে নির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ এই দলনেতাদের মধ্যে ৬ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য, ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ১০ জন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ৬ জন যুগ্ম মহাসচিব ও ৫ জন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। এছাড়া দলের বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি মশিউর রহমানও দায়িত্ব পেয়েছেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, এই নেতারা প্রত্যেকে নিজেদের সাংগঠনিক এলাকায় যাওয়ার সময় কয়েকজনের একটি দল নিজে বাছাই করে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। রিজভী আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে মাছের মড়কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পানির সাথে উজানের ইউরোনিয়াম খনির বর্জ্য ভেসে আসার ফলে জলজ প্রাণীর মড়ক ধরেছে। গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে এই বিষয়টি এসছে। এ বিষয়ে সরকার যে তদন্ত করেছে, তাতে সেখাকার পানি পরীক্ষা ছাড়াই বলা হচ্ছে, পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয়তা নেই।
তিনি বলেন, এই সরকারের কোনো তদন্তই জনগণ বিশ্বাস করে না। পার্শ্ববর্তী দেশের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এতোই অকৃত্রিম বন্ধু যে, বাংলাদেশের প্রতি ভারত যেকোনো অন্যায়কে এরা অন্যায় বলে মনে করে না। রিজভী বলেন, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকাগুলোতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে বয়ে আসা পানির ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা এখন হাহাকার করছে। ধানক্ষেতগুলো পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে। হাজার হাজার টন মাছ ও জলজ প্রাণী পঁচে গিয়ে সারা এলাকার দুর্গন্ধময় পরিবেশে মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। লাখ লাখ মানুষের গৃহে খাবার নেই। ধানক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসলের মৌসুমে কৃষকের গোলা ধানে ভরে উঠবে না। এখানে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। সারাদেশে পুলিশ বিশেষ অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আবারো গণগ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, কোনো ইস্যু বা আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ অভিযানের নামে দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আবারো গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। বাড়িতে নেতা-কর্মীদের না পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এমনকি শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন থেকে। ঢাকা মহানগর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ব্যাপক ধড়পাকড় ও হয়রানি-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি জানান, বিশেষ অভিযানের নামে রোববার নয়া পল্টনে ঢাকা মহানগর কার্যালয় থেকে ফেরার পথে ৯নং ওয়ার্ড নেতা শামসুদ্দিন বকুল ও মো. হারুনকে, জামালপুরে ১৮৯ জন, সাতক্ষীরায় ৪১ জন, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে শতাধিক, বাগেরহাটে ৩৯ জন, পঞ্চগড়ে ৪ এর অধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শিল্পনগরী টঙ্গি থেকে ২০ দলীয় জোটের ১৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেহেরপুরে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
কেবল তাই নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কুমিল্লায় নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি সিটির নির্বাচিত কাউন্সিলর একরাম হোসেন বাবলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোরতাজুল করীম বাদরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কারা কোন এলাকার দায়িত্বে: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাবেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং মানিকগঞ্জ, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ও মহানগর, মির্জা আব্বাস বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজশাহী জেলা ও মহানগর, ড. আবদুল মঈন খান নোয়াখালী ও লক্ষীপুর, নজরুল ইসলাম খান রংপুর জেলা ও মহানগর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সিলেট জেলা ও মহানগর, ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে- আবদুল্লাহ আল নোমান ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, অধ্যাপক এম এ মান্নান নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ নীলফামারী ও লালমনিরহাট, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ঝালকাঠি, সেলিমা রহমান নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ, মোহাম্মদ শাহজাহান মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ, মীর মো. নাসিরউদ্দিন চাঁদপুর ও কক্সবাজার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ঢাকা জেলা, রুহুল আলম চৌধুরী কুড়িগ্রাম, ইনাম আহমেদ চৌধুরী শেরপুর, আমিনুল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আবদুল আউয়াল মিন্টু কুমিল্লা উত্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এজেডএম জাহিদ হোসেন সিরাজগঞ্জ ও পাবনা, শামসুজ্জামান দুদু কুমিল্লা দক্ষিণ ও বান্দরবান, আহমেদ আজম খান জামালপুর ও শরীয়তপুর, জয়নাল আবেদীন গাজীপুর, নিতাই রায় চৌধুরী বরগুনা, শওকত মাহমুদ রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে- আমান উল্লাহ আমান টাঙ্গাইল, মিজানুর রহমান মিনু পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও, আবুল খায়ের ভুঁইয়া মাগুরা, জয়নুল আবদিন ফারুক জয়পুরহাট, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ঝিনাইদহ, মনিরুল হক চৌধুরী মেহেরপুর, ফজলুর রহমান নরসিংদী, হাবিবুর রহমান হাবিব পটুয়াখালী, আতাউর রহমান ঢালী ফেনী, নাজমুল হক নান্নু ফরিদপুর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খুলনা ও মহানগর, যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে- মাহবুবউদ্দিন খোকন মাদারীপুর, মজিবুর রহমান সারোয়ার ভোলা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যশোর, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নাটোর, হাবিবউন নবী খান সোহেল বগুড়া ও গাইবান্ধা, হারুন অর রশীদ নওগাঁ, সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে- ফজলুল হক মিলন মুন্সীগঞ্জ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নড়াইল, আসাদুল হাবিব দুলু দিনাজপুর ও সৈয়দপুর, সাখাওয়াত হোসেন জীবন সুনামগঞ্জ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন পিরোজপুর, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ এবং ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি মশিউর রহমান কুষ্টিয়া জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট দলনেতাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে- গত শনিবার (২২শে এপ্রিল) থেকে শুরু দলনেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা সফর করবেন। জেলা বিএনপির উদ্যোগে এসব কর্মীসভায় টিম প্রধানদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলের অবস্থান ও দলের ঐক্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ৭ই মে’র পরে দলনেতা কর্মীসভার প্রতিবেদন বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রেরণ করবেন। সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। এমজমিন
২৪ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি