ঢাকা : নামসর্বস্ব ৫৮টি রাজনৈতিক দল নিয়ে জাতীয় পার্র্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নতুন জোট গঠন করেছেন। এর মধ্যে দুটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন রয়েছে। বাকি দলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ইসলামী ও সমমান দল। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পার্টি, জাতীয় হিন্দু লীগও রয়েছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের পর এই জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন জাপা চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যার নাম দেয়া হয়েছে সম্মিলিত জাতীয় জোট, সংক্ষেপে ইউএনএ।
নতুন জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে এরশাদ বলেন, নতুন এই রাজনৈতিক জোটের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। প্রাথমিকভাবে এ জোটে দুটি রাজনৈতিক জোট ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থাকছে। সামনে আরো কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এ জোটে যোগ দেবে। বাংলাদেশ জাতীয় জোটে (বিএনএ) দল রয়েছে ২১টি, আর মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুকের নেতৃত্বে জাতীয় ইসলামী মহাজোটে ৩৫টি রাজনৈতিক দল রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সেই হিসাবে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টসহ এরশাদের নতুন জোটে রাজনৈতিক দল হচ্ছে ৫৮টি। নতুন এই জোটের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, স্বাধীনতার চেতনা এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো এই জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। কোনো স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের স্থান এই জোটে হবে না। ইউনাইটেড ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স তিনটি মৌলিক আদর্শের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
ইসলামী মূল্যবোধ তথা সকল ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন, স্বাধীনতার চেতনা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনবোধ নিশ্চিত করা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এই জোটের প্রধান। প্রতিটি দলের মহাসচিবরা থাকবেন মুখপাত্র হিসেবে। আর জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার হবেন জোটের প্রধান মুখপাত্র। জোটগতভাবে জাতীয় ও সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সরকার গঠন এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করা এ জোটের উদ্দেশ্য বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের ভাষ্য।
ঘোষণাপত্রে এরশাদ বলেন, মহান আল্লাহপাকের উপর সর্বোচ্চ বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসা রেখে আমরা নিজ নিজ দল ও জোটের পক্ষে নিম্নস্বাক্ষরকারীরা দেশ ও জাতির স্বার্থে জাতীয় পর্যায়ে একটি জোট গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে- জোটগতভাবে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জোটগতভাবে সরকার গঠন করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সমাজে ন্যায় বিচার ও সু-শাসন নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের ধারা প্রবর্তন করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
নতুন জোট গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক বিশ্বে জোটগত রাজনৈতিক প্রবণতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশেও এই ধারা অব্যাহত আছে। জোটের রাজনীতির মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনের সুযোগ থাকে, যা সংঘাতের রাজনীতির বিপরীতে সমপ্রীতির রাজনীতি প্রবর্তন করতে পারে। জোট গঠনের জন্য আমরা দুইভাবে জোটের শরিক নির্বাচনের নীতি গ্রহণ করেছি। যে সব দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আছে সেই দল সরাসরি জোটের শরিক হিসেবে থাকবে এবং যেসব দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে কিংবা নিবন্ধিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তাদের সমন্বয়ে মোর্চা বা জোট গঠন করে সেই জোটকে আমরা শরিক হিসেবে বৃহত্তর জোটে অন্তর্ভুক্ত করেছি। জোটের অন্তর্ভুক্ত দলের ক্ষেত্রে যেকোনো নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের প্রতীক ব্যবহারের বিষয়টি উন্মুক্ত থাকবে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এই জোট নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেবে। ফল যা-ই হোক না কেন, জোট বহাল থাকবে। জোটের স্থায়িত্বের জন্য রাজনৈতিক বিপদে-আপদে, সুদিনে-দুর্দিনে শরিকরা একে অপরের পাশে থাকবে। স্বার্থের কারণে কোনো দল জোট ছেড়ে যাবে না- এই অঙ্গীকার থাকবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জানান, তিনি ছাড়াও ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মান্নান, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক এবং বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান সেকান্দার আলী মনি নতুন জোটের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে আরো দুটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে ‘কয়েক দফা’ বৈঠক করার কথা বললেও দলগুলোর নাম জানাননি এরশাদ।
তারা জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আমাদের জানালে সুবিধামতো সময়ে জোটে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলে আশা করছি। তবে এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় জোটে যোগ দেয়নি দুটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। দল দুটি হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের ও সুনীল শুভ রায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এরশাদের জোটে যোগ দেয়নি দুটি ইসলামী দল। এমজমিন
৭ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস