শেখ শাফায়াত হোসেন: ২০১২ সালের শেষ দিকে নোট রিফান্ড নীতিমালা নামে একটি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ছেঁড়া বা ফাটা নোটের ন্যূনতম ৯১ শতাংশ অক্ষত থাকলে দাবিদারকে নোটের পুরো মূল্যই দেওয়া হবে। তবে ৭৬ থেকে ৯০ শতাংশ অক্ষত থাকলে দেওয়া হবে ৭৫ টাকা। আর ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অক্ষত থাকলে দেওয়া হবে ৫০ টাকা। কিন্তু ৫০ শতাংশ বা এর নিচে অক্ষত রয়েছে এমন নোটের বিপরীতে কোনো দাবিই পরিশোধ করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অ- অ অ+
কাগজের নোট ছিঁড়ে-ফেটে গেলে অথবা বিনিময়ের অযোগ্য হয়ে পড়লে বদলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকেও বদলে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ব্যাংক ছেঁড়া-ফাটা নোট বদলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে! আবার বদলে দিলেও খরচ পড়ে যায় দ্বিগুণ!
বিষয়টি সম্প্রতি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই খোলাসা করা যাক। কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে পুরনো একটি ১০০ টাকার নোট হাতে এসে পড়ে। অনেক দিন মানিব্যাগের একপাশে পড়ে থাকার পর নোটটি বদলাতে নিয়ে যাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে। ছেঁড়া-ফাটা নোট বদলানোর জন্য ব্যাংকটির ৩০ তলা ভবনের নিচতলার ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, নোটটি দাবির জন্য দিতে হবে। দাবি শাখার কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করার পর নোটের প্রাপ্য মূল্য পরিশোধ করা হবে। সে ক্ষেত্রে সময় লাগবে দুই মাস।
এ সময় ক্যাশ কাউন্টারের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকা পুরনো টাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী নোটটি কম দামে কিনে নিতে চাইলে তাতে রাজি না হয়ে গত ১ মার্চ নোটটি দাবির জন্য দিয়ে আসি। কাউন্টার থেকে এক পৃষ্ঠার একটি ফরম পূরণ করে নোটটি জমা দিলে ফরমের নিচের অংশ ছিঁড়ে রসিদ হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হয়। দুই মাস পর দাবি পরিশোধের তারিখ পড়ে ১ মে। কিন্তু মে দিবসের বন্ধ থাকায় ২ মের পরে যেকোনো দিন এলে ওই দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
দুই মাস অপেক্ষার পর নোটের প্রাপ্য মূল্য আনতে গত বৃহস্পতিবার গুলশানের নর্দা থেকে বাস ও রিকশাযোগে মতিঝিল যেতে-আসতে খরচ হয় প্রায় ১১০ টাকা। এখানেই শেষ নয়। দাবির রসিদ নিয়ে কাউন্টারে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, ওই ভবনেরই দ্বিতীয় তলায় দাবি শাখায় গিয়ে রসিদ দেখিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করে আসতে হবে। স্বাক্ষর করা হয়ে গেলে ওই শাখা থেকে দাবির ফরমটি কাউন্টারে পাঠানো হবে।
তাতে উল্লেখ থাকবে নোটটির বিপরীতে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হবে। সেটা দেখেই প্রাপ্য মূল্য পরিশোধ করা হবে। শেষতক স্বাক্ষর করে এসে কাউন্টারে রসিদ জমা দেওয়ার পর ১০০ টাকার কড়কড়ে একটি নোট ধরিয়ে দিলেন ১২ নম্বর কাউন্টারের কর্মকর্তা। বললেন, ‘নোটের অবস্থা ভালো ছিল বলে পুরো ১০০ টাকাই পেলেন। ’
১০০ টাকার নোট বদলাতে দুই দফায় গুলশানের নর্দা থেকে মতিঝিলে আসতে ২০০ টাকার বেশি খরচ হয়। (নর্দা থেকে মতিঝিল যাওয়ার সরাসরি কোনো বাস নেই। কমলাপুর পর্যন্ত সিটিং বাসে ৩৫ টাকা ভাড়া। সেখান থেকে রিকশায় মতিঝিল শাপলা চত্বর ২০ টাকা। একবার যেতে-আসতে ১১০ টাকা খরচ।
নোট জমা দিতে এক দিন যেতে হয়। তুলতে এক দিন যেতে হয়। মোট ২২০ টাকা খরচ)। একটি নোট বদলাতে দুই মাস কেন অপেক্ষা করতে হচ্ছে জানতে চাইলে দাবি শাখার কর্মকর্তারা বলেন, ‘এখানে পুরনো টাকা বদলানোর চাপ অনেক বেশি। তা ছাড়া একটি নোট অনেকগুলো হাতে পরীক্ষা করে তারপর মূল্য পরিশোধ করা হয়। এর মধ্যে একবার কারেন্সি অফিসারের কাছেও নিয়ে যাওয়া হয় নোটটি। যে কারণে নোট বদলাতে অনেক সময় লেগে যায়। ’
পুরনো নোট বদলানোর সময় নোট মাপজোখে যাতে কম সময় লাগে সে জন্য ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি নোট মেজারমেন্ট মেশিন চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় কারেন্সি অফিসার ছিলেন মো. সাইফুল ইসলাম খান।
তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ওই মেশিন চালুর ফলে ছেঁড়া-ফাটা নোট বদলাতে সময় আগের চেয়ে অনেক কম লাগবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটনা হয়েছে উল্টো। এখন আরো বেশি সময় লাগছে। মেশিন চালুর আগে দাবির জন্য জমা দেওয়া নোট বদলাতে সময় লাগত এক মাস, এখন লাগছে দুই মাস। ’
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এর কারণ জানতে চাইলে মতিঝিল অফিসের বর্তমান কারেন্সি অফিসার মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক বেশি পুরনো নোট জমা পড়ছে দাবির জন্য। যে কারণে সময়ও লাগছে বেশি। এটা নির্ভর করছে নোট জমা পড়ার ওপর। ’
দাবির জন্য জমা পড়া নোট যাচাইয়ে অনেক হাত ঘুরে তারপর নোটটি মূল্য পরিশোধের জন্য পাস করা হয়। এই ধাপ কমালে তুলনামূলক কম সময়ে দাবি পরিশোধ করা যাবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ ওয়াহাব বলেন, ‘এটা তো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। এটা রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ’
নোটের মূল্য পরিশোধের জন্য ২০১২ সালের শেষ দিকে নোট রিফান্ড নীতিমালা নামে একটি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ছেঁড়া বা ফাটা নোটের ন্যূনতম ৯১ শতাংশ অক্ষত থাকলে দাবিদারকে নোটের পুরো মূল্যই দেওয়া হবে।
অর্থাৎ ১০০ টাকার একটি নোট ছিঁড়ে যাওয়ার পরও যদি নোটটির ৯১ শতাংশ অক্ষত থাকে, তাহলে ওই নোটের দাবিদারকে ১০০ টাকাই পরিশোধ করা হবে। তবে ৭৬ থেকে ৯০ শতাংশ অক্ষত থাকলে দেওয়া হবে ৭৫ টাকা। আর ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অক্ষত থাকলে দেওয়া হবে ৫০ টাকা। কিন্তু ৫০ শতাংশ বা এর নিচে অক্ষত রয়েছে এমন নোটের বিপরীতে কোনো দাবিই পরিশোধ করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।-কালের কণ্ঠ
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস