নিউজ ডেস্ক: বন্ধু নাঈম আশরাফের মাধ্যমেই সুন্দরী মডেলদের ডাকতেন বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার সাফাত আহমেদ। শুধু তাই নয়, এই বন্ধুর মাধ্যমে তিনি সুন্দরী তরুণীদেরও সংগ্রহ করতেন। এরপর কোনো না কোনো হোটেলে পার্টির আয়োজন করতেন। আর সেখানেই রাতভর ফূর্তিতে মেতে উঠতেন তিনি। এসব পার্টি চলত গভীর রাত পর্যন্ত। কখনও কখনও ভোরের আলোয় ভাঙত তাদের সেই মিলনমেলা।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন সাফাত নিজেই। তিনি আরও জানান, প্রথম সারির সুন্দরী মডেল-আইটেম গার্লরা ছাড়াও মাঝে মধ্যে এ সারির বিদেশি অতিথিদের আনা হয় এসব জলসায়।
এর আগে, প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত বাংলাদেশের সিনেমা জগতের ৪ জন নায়িকার সঙ্গে নিয়মিত অবৈধ সম্পর্ক থাকার কথা জানান। যাদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে তিনি অনৈতিকভাবে মেলামেশা করতেন। এছাড়া প্রায় এক ডজন বান্ধবীর নাম ফাঁস করেছেন, যাদের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের কথাও খোলামেলা স্বীকার করেছেন। এ সব বান্ধবীদের মধ্যে উঠতি কয়েকজন মডেলও রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, প্রতি রাতেই তিনি ও তার বন্ধুরা পার্টি করতেন। পাঁচ তারকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এসব পার্টিতে বন্ধু-বান্ধবীরা হাজির থাকতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত জানান, তাদের ২০ থেকে ২২ জন বন্ধুর একটি গ্রুপ আছে। এ গ্রুপে তাদের বন্ধুদের মধ্যে দেশের বেশ কয়েকজন শিল্পপতি, রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের প্রভাবশালীদের সন্তান রয়েছে। তারা রাত হলেই একটি স্থানে জড়ো হন। প্রতিরাতেই তারা পাঁচ তারকা হোটেলে বিভিন্ন পার্টি ছাড়াও রেসিং কার নিয়ে লং ড্রাইভে যেতেন। মাঝে মধ্যে ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ আশপাশের দেশে দল বেঁধে বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে যেতেন।
প্রতিদিন তার হাত খরচের দুই লাখ টাকা তার বাবা দিতেন বলে দাবি করেন সাফাত। কখনো এর বেশি টাকার প্রয়োজন হলে ঢাকা শহরে আপন জুয়েলার্সের ৮টি শোরুমের যে কোনো একটিতে ফোন করে অতিরিক্ত টাকা আনিয়ে নিতেন। কখনো তার বাবা এ টাকা খরচের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেননি।
সূত্র বলছে, ২৮ মার্চ রেইন ট্রি হোটেলে নির্যাতনের ঘটনার সময় উপস্থিত দুই অভিযুক্তের বন্ধু শাহরিয়ার আহমেদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। একপর্যায়ে শাহরিয়ার আহমেদকে সাফাতের মুখোমুখি করা হয়। শাহরিয়ার পুলিশকে বলেন, সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার দুই নির্যিাতিত বান্ধবীর আমন্ত্রণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ওই দিন সঙ্গে তার গার্লফ্রেন্ডও ছিল। সেদিন তার গার্লফ্রেন্ডকেও নির্যাতন করতে চেয়েছিল সাফাত ও নাঈম। এ ক্ষেত্রে বেশি আগ্রাসী ছিল নাঈম।
তিনি বলেন, ‘এ সময় আমি ও আমার বান্ধবী সাফাত ও নাঈমের পা জড়িয়ে ধরে তাকে নষ্ট না করতে অনুরোধ করি। সাফাত আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল বলে আমার গার্লফ্রেন্ড নির্যিতিত হয়নি। তবে আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছিল সাফাত, সাকিফ ও নাঈম। মাথায় পিস্তল ধরে উল্টাপাল্টা স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল। ’
এক পর্যায়ে শাহরিয়ারকে সামনে রেখে সাফাত ও সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাহরিয়ারকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে সাফাত। চাঞ্চল্যকর এই নির্যিতন মামলার চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত সহায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন। গত রাতে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, নির্যাতনের ভিডিওচিত্রের ব্যাপারে মুখ খুলছে না গ্রেফতার দু'জন। তবে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে ঘটনার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত রয়েছে এমন অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।
চাঞ্চল্যকর এই নির্যাতন মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সাফাত আহমেদের দেয়া তথ্য তারা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। তবে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি আপসে হয়েছে- সাফাতের এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ ওই নির্যাতন মামলাটি তদন্ত করছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব তথ্য-প্রমাণ আমলে নেয়া হচ্ছে না। কারণ আপসে হলে মামলা হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে নির্যাতনের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম) ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা। বর্তমানে সাফাত আহমেদ ছয় ও সাদমান সাকিফ পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
দুই তরুণীকে নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ মামলার পলাতক আসামি মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ, ড্রাইভার বেলাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদের অবস্থান জানতে তাদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস