নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল খারিজ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রিভিউ খারিজ করে এ রায় দেন।
রায়ের ব্যাপারে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারো আপিল বিভাগে এসে সাজা কমেনি। দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর সাজা কমেছে। তাকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছি, এতেই খুশি।
তিনি আরও বলেন, আপিল বিভাগে আমরা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। প্রমাণ-দলিলাদি দিয়ে বলেছিলাম, ঘটনার সময় তিনি পিরোজপুরে ছিলেন না। এই রায়ে আপিল বিভাগের এক বিচারপতি তাকে খালাস দিয়েছিলেন। একাত্তরে নিহত পিরোজপুরের বিশা বালি হত্যার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তার ভাইকে হত্যায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জড়িত ছিলেন না। এর পর তাকে তুলে নিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি।
এ ছাড়া আরো একটি বিষয় আমরা আদালতে বলেছি। রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিউ করেছে, তা সঠিক হয়নি। তামাদি আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে তাদের রিভিউ বাতিলের আবেদন করেছিলাম। আপিল বিভাগ দুটি রিভিউ শুনেছেন। শুনানি শেষে তা খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ রায় আমাদের মেনে নিতে হবে।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ আবেদন করে। অন্যদিকে খালাস চেয়ে সাঈদীর আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন করেন। গতকাল রবিবার থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত দুই পক্ষের বক্তব্য শোনোর পর সোমবার পর্যন্ত তা মুলতবি করেন আদালত। সোমবার সকালে ফের শুনানি শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন।
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। মোট ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনে পাঁচটি যুক্তি দেখানো হয়। একই বছরের ১৭ জানুয়ারি আপিলের রায় থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন সাঈদী। মোট ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস পেতে ১৬টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত সাঈদীর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন। নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারে রাষ্ট্র বা আসামিপক্ষ।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস