নিউজ ডেস্ক: জন্মদিনের পার্টিতে দুই তরুণীকে রাতভর নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি দুই নির্যাতক সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম)। গর্ভধারণ রোধে দুই তরুণীকে সেদিন জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ায় তারা।
নির্যাতিত দুই তরুণীর এক চিকিৎসক বন্ধু সেই বড়ি খাওয়ার জন্য নিষেধ করে। এ কারণে সেই বন্ধুকে মারধর করে ইয়াবা খেতে বলে। পরে সেই ইয়াবা খাওয়ার ভিডিও ধারণ করে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল। তারপর সাফাত ও নাঈম বলে, ‘এই ঘটনা যদি কাউকে বলিস, তবে ইয়াবার মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেব। তোদের ইয়াবাখোর বানিয়ে দেব।’
জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ানোর পরও দুই তরুণীকে আবারও নির্যাতন করা হয়। যে দুটি কক্ষে দুই তরুণীকে সাফাত ও নাঈম নির্যাতন করে তার মাঝখানে একটি ফলস পার্টিশন ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বিল্লাল নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে।
বনানীর দি রেইনট্রি হোটেলে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে ২৮ মার্চ রাতে দুই তরুণী নির্যাতনের শিকার হন। র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ভয়াবহ সেই রাতের ঘটনার এমন বর্ণনা দিয়েছে সাফাতের ব্যক্তিগত গাড়িচালক বিল্লাল।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পুরান ঢাকার নবাবপুর থেকে র্যাব-১০ এর একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। পরে রাত ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব। সেদিন দি রেইনট্রি হোটেলে যা ঘটেছিল পুরো ঘটনা তুলে ধরেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর। সোমবার রাতে ডিবি পুলিশ গুলশান ১ নম্বর সার্কেল থেকে নির্যাতন মামলার অন্যতম আসামি সাফাতের বডিগার্ড রহমত আলীকে গ্রেফতার করে। তবে বডিগার্ড হিসেবে যোগদানের সময় তার নাম গোপন করেছিল। সে সময় রহমত তার প্রকৃত নাম গোপন করে আবুুল কালাম আজাদ পরিচয়ে কাজে যোগ দেয়। গত রাতে টেলিফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম।
নির্যাতন মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ সিলেটের যে কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। গত কয়েক দিনে সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দারা জেনেছে, সর্বশেষ তার অবস্থান ছিল সিলেট শহরের জালালাবাদ এলাকায়। এর পর থেকেই সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিম।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, ঘটনার সময় নির্যাতিত দুই তরুণীর দুই বন্ধু তাদের সঙ্গে ছিল। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার নামে একজন ছিল চিকিৎসক। সাফাত ও নাঈম দুই তরুণীকে নির্যাতনের পর জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ানোর দায়িত্ব দেয় শাহরিয়ারকে। শাহরিয়ার এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে ইয়াবা খেতে বাধ্য করে তারা। পরে ইয়াবা সেবনের ভিডিও ধারণ করে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল। এ ঘটনা যদি বাইরে প্রকাশ করে তবে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ারও ভয় দেখানো হয় শাহরিয়ারকে। সেই ভিডিও বিল্লালের মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছে বিল্লাল। তবে সেই ভিডিও তার মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর। তিনি বলেন, বিল্লালের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল সেদিনের ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছে। সে র্যাবকে বলেছে, ঘটনার দিন সাফাতকে নিয়ে সাড়ে ৪টার দিকে দি রেইনট্রি হোটেলে যায়। হোটেলে তাকে রেখে বনানীর আগোরার সামনে থেকে সাফাতের এক মেয়ে বন্ধুকে গাড়িতে উঠায়। তাকে নিয়ে বনানীর ১১ নম্বর যায়। সেখান থেকে সাফাতের আরও এক মেয়ে বন্ধুকে গাড়িতে উঠায় বিল্লাল। দু’জনকে নিয়ে সাড়ে ৬টার দিকে হোটেলে ফেরে সে। সেখানে তখন নাঈমও অবস্থান করছিল। দুই মেয়েকে রেখে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নিচে সে অবস্থান করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান থেকে ভুক্তভোগী দুই তরুণীকে নিয়ে হোটেলে যায় বিল্লাল। রাত ১০টার দিকে সাফাতের দুই বান্ধবীকে নিয়ে সে হোটেল ত্যাগ করে। পরে রাত ৪টার দিকে আবার হোটেলে যায়। সাফাত তাকে দুই কক্ষের ফলস পার্টিশন আছে সেখানে থেকে ভিডিও করতে বলে। এ সময় সে সেখান থেকে নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও করে।
র্যাব জানায়, ঘটনার পর সাফাতসহ সবাই ঢাকাতেই ছিল। মামলা হওয়ার পর তারা মাওনা হয়ে সিলেটে যায়। সেখানে একেকজন একেকটি রিসোর্টে অবস্থান নেয়। বিল্লাল সিলেট শহরের উপকণ্ঠের একটি রিসোর্টে ছিল। সাফাত ও সাদমান গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু গ্রেফতারের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর আর কারও সঙ্গে কারো যোগাযোগ হয়নি। বিল্লাল সিলেট থেকে ছাতক যায় শুক্রবার। ছাতকে গিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে রোববার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে ঢাকায় আসে। নবাবপুরে একটি বোর্ডিংয়ে সুজন নামে ওঠে।
নির্যাতনের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা সাফাত আহমেদ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বলেছেন, সিলেট যাওয়ার পর তার সঙ্গে থাকা বন্ধু নাঈম, গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকে অন্য কোথাও আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি (সাফাত)। সাফাত গোয়েন্দাদের বলেছেন, এ সময় নাঈম সবাইকে একসঙ্গে সিলেটের কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারত চলে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সাফাত এতে রাজি হয়নি। এর পরই তারা যে যার মতো আলাদা হয়ে যায়। সাফাতের দেয়া এ তথ্যে গোয়েন্দারাও ধারণা করছেন, নাঈম অবৈধপথে ভারতে পালিয়ে যেতে পারে।
শিল্পপতি কিংবা বড় ব্যবসায়ী না হলেও কেন সার্বক্ষণিক সশস্ত্র দেহরক্ষী সঙ্গে রাখতেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাফাত গোয়েন্দাদের বলেছেন, সারাদিন বাসায় ঘুমিয়ে কাটলেও সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি ভোররাতে ফিরতেন। তার বেপরোয়া চলাফেরার বিষয়টি পরিবারের সবাই জানতেন। কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাকে রক্ষা করতে তার বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম সার্বক্ষণিক বডিগার্ড দিয়েছিলেন। এর আগে যখন তার ব্যক্তিগত বডিগার্ড ছিল না, তখন মাঝে মধ্যে বাসার নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে বাইরে বের হতেন। তবে পিয়াসার (সাফাতের সাবেক স্ত্রী) সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরুর পর থেকে তার বাবা সার্বক্ষণিক বডিগার্ড নিয়োগ দিয়েছিলেন। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে থাকা ধনীর দুলাল সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফের নানা ‘আবদার’ মেটাতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
নির্যাতন মামলাটির তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, বেশির ভাগ সময় সাফাত পুলিশের সরবরাহ করা খাবার গ্রহণ করছে না। এর বিপরীতে সে দেশের প্রথম শ্রেণীর অভিজাত রেস্টুরেন্ট থেকে ফাস্টফুড আইটেমের খাবার এনে দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। সাফাতের আবদার মেটাতে বিদেশি ‘ব্ল্যাক’ ব্র্যান্ডের সিগারেটও সরবরাহ করতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। দু-একবার তার এ ‘আবদার’ রক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুলিশ হেফাজতে কোনো আসামিকে বাইরের খাবার দেয়ার নিয়ম নেই। তারপরও জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য পেতে তারা (পুলিশ) মাঝে মধ্যে আসামির সঙ্গে সখ্য গড়তে এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিন (শনিবার) কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছেন সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শেষে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রোববার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও রাজি হন সাফাত। তবে সেদিনের ঘটনাকে কোনোভাবেই নির্যাতন বলতে রাজি নন সাফাত আহমেদ। বরং সমঝোতার মধ্য দিয়েই সবকিছু হয়েছে বলে দাবি করছেন সাফাত। তবে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে আরও কিছু সময় নিতে চান তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে চাঞ্চল্যকর এ নির্যাতন মামলা তদন্তে গঠিত সহায়ক কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এ কারণে তারা ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা প্রমাণযোগ্য করার মতো তথ্য পেলেই গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য ও তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আগামী শুক্রবার এ ব্যাপারে ডিএমপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করা হতে পারে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায়।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে পারে জেনেও সাফাত দেশ ছাড়তে চায়নি। তার ধারণা ছিল, যেভাবেই হোক বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম তাকে ছাড়িয়ে নেবেন। এ ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি কিছুটা বন্ধ হলে নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেবেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত বলেছেন, ওই ঘটনার পর মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে বাবার পরামর্শেই সে কিছু দিনের জন্য আত্মগোপনে চলে যান। তবে পলাতক অবস্থায় সময় কাটানোর জন্য তিনি সাদমান সাকিফকে তার সঙ্গে রাখেন।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তের এ পর্যায়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণে সেদিন রাতে দুই তরুণীকে সাফাত ও নাঈম নির্যাতন করেছিল বলে প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় পর নির্যাতিত দুই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এ কারণে মেডিকেল রিপোর্টে নির্যাতনের প্রমাণ মিলবে না ধরেই তারা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে তদন্তে মেডিকেল রিপোর্টের বাইরে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য আলামতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার দিন দি রেইনট্রি হোটেলের রুমপার্টিতে সাফাতের দুই বান্ধবী যোগ দিয়েছিলেন। অপরদিকে নির্যাতিত দুই তরুণীর দুই বন্ধুকে একটি কক্ষে সারারাত আটকে রাখা হয়েছিল। এই চারজনকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী করা হতে পারে।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্ত করছে বলে তিনি দাবি করেন। প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দি রেইনট্রি’ হোটেলে নির্যাতনের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম) ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা।
শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে সাফাত আহমেদকে ছয় ও সাদমান সাকিফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।। দুই তরুণীকে নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস