বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭, ১১:২৭:২৯

ধনি থেকে ফকির হতে বসা দিলদার আহমেদ সেলিমের গল্প!

ধনি থেকে ফকির হতে বসা দিলদার আহমেদ সেলিমের গল্প!

ঢাকা: পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে চাকরি করতেন।  গল্পটি কোনো রূপকথা কিংবা সিনেমার নয়, বাস্তবের। গল্পটি দেশের অন্যতম স্বর্ণ ব্যবসায়ী আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের। আস্তে আস্তে সফল শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।

দিলদার আহমেদ সেলিমের এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছ থেকে তার সম্পর্কে এমন তথ্য মিলেছে।

সম্প্রতি তার ‘গুণধর’ ছেলে সাফাত আহমেদের নির্যাতন কাণ্ডের কারণে সেলিম এখন ‘টক অব দি কান্ট্রি’। তাই ছেলের পাশাপাশি বাবাও ‘আলোচিত’ হচ্ছেন। ছেলের নির্যাতন ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সেলিমের ব্যবসা ও ব্যক্তিগত জিনিসও তদন্ত আওতায় এসেছে।

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‌দ্য রেইন ট্রি হোটেলে সেলিমের ছেলে সাফাত ও তার বন্ধুরা মিলে দুজন তরুণীকে রাতভর নির্যাতন করে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়। একপর্যায়ে নির্যাতন মামলা হয়। গ্রেপ্তার হয় সাফাত ও তার এক বন্ধু।

মামলার ঘটনা জানাজানি হলে আত্মগোপনে চলে যায় সাফাত ও তার বন্ধুরা। এ অবস্থায় গণমাধ্যমে ছেলের পক্ষে সাফাই গেয়ে আলোচনায় চলে আসেন দিলদার আহমেদ সেলিম। গণমাধ্যমে সেলিম মন্তব্য করেন, ‌‘আমার পোলা আকাম করছে, তো কি হইছে? জোয়ান পোলা একটু-আধটু তো এসব করবই। আমিও তো করি। আমার যৌবন কি শেষ হয়ে গেছে? আমি এখনও বুড়া হইনি।’ গণমাধ্যমে দিলদার আহমেদ সেলিমের এমন বেফাঁস মন্তব্যে তোলপাড় চলছে।

এদিকে ব্যবসায়ী সেলিমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি)। প্রাথমিকভাবে আপন জুয়েলার্সের বিআইএন তল্লাশি করে ডায়মন্ড আমদানির কোনো তথ্য পায়নি সিআইআইডি।

সংস্থাটি বলছে, এক ক্যারেট (দশমিক ২ গ্রাম) ডায়মন্ডও বৈধভাবে আমদানি করেনি আপন জুয়েলার্স। অথচ গুলশান, বায়তুল মোকাররম ও উত্তরার আপন জুয়েলার্সের শোরুমে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ডায়মন্ডের অলঙ্কার। মূলত কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে এসব ডায়মন্ড শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে। সিআইআইডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে বৈধভাবে আমদানি করা ডায়মন্ডের প্রাপ্ততথ্যে দেখা গেছে, অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে সামান্য পরিমাণ ডায়মন্ড আমদানি করেছে। এ তালিকায় আপন জুয়েলার্সের নাম নেই। এরপর আপন জুয়েলার্সের বিগত দুই বছরের আমদানির তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি এক ক্যারেট ডায়মন্ডও বৈধভাবে আমদানি করেনি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্ততরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান বলেন, প্রাথমিকভাবে আপন জুয়েলার্সের ব্যবসা নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) তল্লাশি করে ডায়মন্ড আমদানির তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যায়, তার হয়তো ডায়মন্ড চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনে, অথবা মিস ডিক্লারেশনের (ঘোষিত পণ্যের পরিবর্তে অন্য পণ্য আনা) মাধ্যমে সেগুলো আনা হয়। শিগগিরই এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আপন জুয়েলার্স তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে শাড়ির ব্যবসার মাধ্যমে। ওই ব্র্যান্ডের নাম ছিল ‘আপন শাড়ি’। এরপর তারা জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়। এ ব্যবসার মধ্য দিয়েই তাদের ভাগ্যের চাকা ফেরে। নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে আপন জুয়েলার্স চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় সবাই তাদের উত্থানের গোপন রহস্য কম-বেশি জানেন। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে তার সমালোচনাও করা হয়েছে। কারও সমালোচনার তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেট পরিচালনার মাধ্যমে রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে যান তারা (আপন জুয়েলার্সের মালিক)।

বিগত বিএনপি সরকারের আমলে রাইফেলস স্কয়ারে (বর্তমানে সীমান্ত স্কয়ার) আপন জুয়েলার্সের শোরুমে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করে। পরে সেটিকে ধামাচাপা দেয়া হয়।

সেলিমের পরিবারিক অবস্থার বিষয়ে তার সাবেক পুত্রবধূ এশিয়ার টিভির সাবেক পরিচালক ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা বলেন, ‘তার মাতলামির কথা বলে শেষ করা যাবে না। এসব কারণে বড় ছেলে তো নষ্ট হয়েছেই, এখন ছোট ছেলে ইফাতও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেলের বন্ধু হলেও নাঈমকে (দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম) দিয়ে তিনি শোবিজের উঠতি মডেলদের ভাড়া করতেন।

অনেক মডেলকে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরেও গেছেন। বাবাকে দেখে তার ছেলেও এসবই শিখেছে। সাফাতও আপন জুয়েলার্সের মডেলদের নিয়ে বিদেশে যাওয়া শুরু করেছে। কিছুদিন আগে সে একজন আলোচিত মডেল নিয়ে ভারতে যায়। ওই মডেলের সঙ্গে সাফাতের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে।’

এদিকে, ছেলের অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুললেন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাফাতের মা নিলুফার জেসমিন। তিনি দাবি করেন সাফাতের বাবাই ছেলেকে অনেক অসৎ কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং তার লায় পেয়েই ছেলের আজকে এই দশা হয়েছে। তিনি নির্যাতিত দুই মেয়েদের সঙ্গে যা হয়েছে তা সত্য হলে এটি অন্যায় বলেও অভিমত দেন।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে