ঢাকা : শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতিতে শামিল হলেন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গত কয়েকদিনে একাধিকবার ভোট ইস্যুতে কথা বলেছেন তিনি। ভোট চেয়েছেন ধানের শীষের জন্য। বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায়- সে ধারণাও প্রকাশ করেছেন।
তবে এবার আর খালি মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না বলে নিজের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানোর পর ভোটের রাজনীতি আরো গতি পেয়েছে। প্রতিদিনই এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও ভোটের এখনো অনেক দূর। আওয়ামী লীগ অবশ্য নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেকটাই সেরে রেখেছে।
ঢাকার বাইরে একাধিক সমাবেশে নৌকায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের প্রার্থী নির্ধারণের কাজও চলছে। এক দশক ধরে বিএনপির রাজনীতিতে ঘোর অমানিশা। ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে চাননি। তবে ভেতরে-বাইরের চাপে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ওই নির্বাচনে বিএনপি দাঁড়াতেও পারেনি।
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত ভুল না সঠিক তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। নীতিনির্ধারকরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। ঢাকার একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি হারলেও দলের নেতাকর্মীদের অবস্থা হয়তো এখনকার চেয়ে ভালো থাকতো। বর্তমানের প্রশ্নটি আরো বড়, আগামী নির্বাচনে কি খালেদা জিয়া অংশ নেবেন? অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন?
গত কয়েক বছরে বিএনপির রাজনীতিতে ‘ঈদের পর, ঈদের পর’ শব্দযুগল এতবার ব্যবহার হয়েছে যে, এ নিয়ে বিপুল হাস্যরস তৈরি হয়েছে। অতীতে বিএনপি বহুবারই ঈদের পর আন্দোলনের কথা বলেছে। এবার অবশ্য ঈদের পর আন্দোলনের কোনো ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। তবে ঈদের পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ফর্মুলা ঘোষণার কথা রয়েছে দলটির। দলীয় চেয়ারপারসনই এ ফর্মুলা ঘোষণা করবেন।
সহায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি সীমিত পর্যায়ের আন্দোলনে যেতে পারে বলেও সূত্রে জানা গেছে। যদিও সাংগঠনিক পুনর্গঠনে বিএনপির নেয়া একাধিক উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি। গত নির্বাচনে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের অবস্থান ছিল এ ব্যাপারে ভিন্ন। খালেদা জিয়া এখন বলছেন, ভারতের সুরও কিছুটা বদল হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপি নেত্রী অবশ্য খোলাসা করে আর কিছু বলেননি।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে অবশ্য এখনো দুটি মত। তবে নীতিনির্ধারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। তারা মনে করেন, সরকার কৌশলে গত নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে দেয়নি। বিএনপির ভেতরের একটি অংশ এক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। দলের ভেতরের তথ্য রীতিমতো পাচার হয়ে যেত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে এসব ব্যাপারে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া তেমন কোনো কড়া পদক্ষেপ নিতে পারেননি। সাংগঠনিকভাবেও বিএনপি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাববোধ করছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনে তেমন সফলতার ছাপ রাখতে পারেননি।
তবে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ভোটের ছায়া প্রচারণা শুরু করেছেন বেগম খালেদা জিয়া।
রমজান মাসে প্রায় প্রতিদিনই তিনি কোনো না কোনো ইফতার পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন। এসব ইফতার পার্টিতে সমকালীন রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলার পাশাপাশি ভোট নিয়েও কথা বলছেন খালেদা জিয়া। এতে জিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে।
বিশেষ করে মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের ভোট রাজনীতিতে শামিল করা হবে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক অনেক স্থানীয় নির্বাচনে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেছে বহু জায়গায় বিএনপি কোনো শক্ত প্রার্থী দিতে পারেনি। এসব এলাকায় সরকারদলীয় প্রার্থীরা এক ধরনের ওয়াকওভারই পেয়েছেন।
মূলত, হয়রানির ভয়েই বিএনপি নেতারা প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাননি। অনেক এলাকায় আবার দেখা গেছে, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারতেন এমন অনেক নেতা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন না। এক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে দুর্বল প্রার্থী দিতে হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল আর বিশ্বাস ফেরানোই এখন খালেদা জিয়ার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এমজমিন
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি