মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল: ‘একটা বেলুন নেন স্যার, দাম মাত্র ১০ টাকা। আপনারা বেলুন কিনলেই না টাকা জমাইয়া ঈদের লাইগ্যা একটা নতুন জামা কিনুম।’
সোমবার রাত ১০টায় ধানমন্ডি অর্চার্ড পয়েন্ট মার্কেটের প্রবেশ দ্বারের অদূরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে একটি বেলুন কেনার জন্য বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষদের কাছে ঠিক এভাবেই অনুনয়-বিনয় করছিল এক ক্ষুদে শিশু।
বয়স কতই বা হবে। খুব বড় জোর সাত-আট বছর। শিশুটির হাতে লাল, সবুজ, হলুদ, আকাশি ও কমলাসহ নানা রঙ-বেরঙের বেলুন। পরনে প্রিন্টের একটা শার্ট, হাফপ্যান্ট ও পায়ে স্যান্ডেল। হঠাৎ করে দেখলে মার্কেটিং করতে আসা কোনো পরিবারের ক্ষুদে সদস্য বলে ভ্রম হয়।
ঈদকে সামনে রেখে শপিং করে যারাই মার্কেট থেকে বের হচ্ছিলেন তাদের সবাই পরিপাটি পোশাক-পরিচ্ছেদ পরা শিশুটির অনুনয়-বিনয় দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছিলেন।
কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক একটি বেলুন কিনে শিশুটির সঙ্গে আলাপকালে জানতে পারেন তার নাম সোহাগ। রায়েরবাজার বেরিবাঁধ সংলগ্ন বৌবাজার এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। তার বাবা আবুল হোসেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী, মাও পা ভেঙে বিছানায় পড়ে আছেন।
তার বড় ভাই শুভ স্থানীয় একটি হেয়ার কাটিং সেলুনে সামান্য বেতনে চাকরি করে। বড় বোন সুরাইয়া বাসাবাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করেন। সংসারের অভাব গোছাতে ওরা সকলে মিলে কাজ করে।
সোহাগ জানায়, সে স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। রমজান মাসে প্রতিদিন বিকেলে এক ফুফুর সঙ্গে ধানমন্ডি এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের সামনে বেলুন বিক্রি করে। বড় ভাই শুভ তাকে পুঁজি দিয়েছে।
সে আরও জানায়, খুব বেশি বেলুন বিক্রি করতে পারে না। যাই লাভ হয় তা নিয়ে বড় ভাইকে দিয়ে দেয়। বড় ভাই তাকে বলেছেন, ২৭ রমজানের পর তাকে লাভের টাকা দিয়ে একটি নতুন জামা কিনে দেবেন। আর তাই প্রতিদিন মার্কেট শেষে ছোট শিশুদের নিয়ে যারা বের হন তাদের প্রত্যেককে একটি করে বেলুন কিনতে অনুরোধ জানায়। কেউ কেনেন কেউ কেনেন না।
কিন্তু বন্ধ হয় না সোহাগের অনুনয়-বিনয়, ‘স্যার একটা বেলুন নেন স্যার, ঈদের নতুন জামা কিনুম।’-জাগো নিউজ
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস