ঢাকা : দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন বাস্তবায়নে আরো এক টার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। এজন্য দেশবাসীকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তুলে দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে যেসব কাজ হাতে নিয়েছি সেসব বাস্তবায়ন করেছি। যেসব মেগা প্রকল্প হাতে রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও এক টার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের উন্নয়ন করে, সেটা প্রমাণিত। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে। এটাই আওয়ামী লীগের নীতি। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। সেজন্য দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কাকে চায়। এরা দেশ শাসন করতে আসে না, লুটপাট-দুর্নীতি-নির্যাতন করতে আসে।
এ সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যদের দুর্নীতি-লুটপাট-নির্যাতনের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদেশে সব নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই হ্যাঁ-না ভোট। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নামে আরেকটি প্রহসন। ভোট আর কাউকে দিতে হতো না। ভোটের বাক্স এমনিতেই ভরে যেত। আর ভোটের বাক্সে কী আছে, আর না আছে তাও হিসাব ছিল না। ঘোষণা একটা দিয়ে দিলেই হয়ে গেল।
এরপর জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। সেটা আমার এখনও মনে আছে। সে সময় একটি সরকারি পত্রিকা নির্বাচনের ভবিষ্যৎ আগাম ঘোষণা দিয়ে আর্টিকেল লিখেছিল। সরকারি পত্রিকাটি ছিল বিচিত্রা। তখন বিচিত্রা পত্রিকা সরকারি ছিল। সেই আর্টিকেলে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ মাত্র ৪০টি আসন পাবে। এটা হলো ’৭৯ সালের নির্বাচন। ওই আর্টিকেল পড়ার পরেই আমি বললাম যে, এটা তো স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে তাদের পরিকল্পনাটা কী, কয়টা আসন দেবে, সেটা আগে থেকে ঠিক করা? কাজেই এটা তখন ওইভাবেই তৈরি করা ছিল এবং সেখানে আওয়ামী লীগ মাত্র পেয়েছিল ৩৯টি সিট।
আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া প্রথমে একটা দল বানাল। কিন্তু টিকল না। তারপর মনে হয় ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন একটা কমিটি হলো। জাগদল হলো। তারপর এ রকম চার দফায় গিয়ে বিএনপি বানাল। মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় বসে দল গঠন করে রাজনীতিতে অবতরণ করা এবং সেই দলই পেয়ে যায় বিরাট সংখ্যায় সিট। এটা তো বোঝাই যায়, একটা দল তৈরি করল হাঁটতে শিখল না, চলতে শিখল না, অমনি সে সব সিট পেয়ে গেল।
জনগণ ভোটের মালিক। জনগণ ভোট দেবে। আমার ভোট আমি দেব। যাকে খুশি তাকে দেব। এই স্লোগান কিন্তু আমরাই দিয়েছি। ভোট এবং নির্বাচনকে স্বচ্ছ করার জন্য যতগুলো পদক্ষেপ এ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মূলত প্রণেতা আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ কখনো ১৪ দল, কখনো জোট-মহাজোট করে দাবিগুলো তুলে মানুষকে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা, মানুষকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, তার সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। এটা কিন্তু আওয়ামী লীগেই করেছে। আর করতে গিয়ে যত অত্যচার, জেল-জুলুম, এগুলো কিন্তু সব সময় আওয়ামী লীগের ওপরেই এসেছে। আওয়ামী লীগ অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করেও জনগণের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাসী এবং নির্বাচনই চেয়েছি। আমরা এদেশের মানুষকে নির্বাচন সম্পর্কে সচেতন করে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছি। যার ফলে আমরা ১৯৯৬ সালে সরকারে এলাম। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের কথা মনে আছে। মাগুরা উপ-নির্বাচন নিয়ে আমাদের আন্দোলন। এরপরে ’৯৬ সালের যে নির্বাচন হলো ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একদিনেই সব সিট নিয়ে গেল। সে কথা আমার মনে আছে।
তারপরেই আমরা আন্দোলন করলাম, মাত্র দেড় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়া সরকার উৎখাত করে দিয়ে আবার পুনরায় নির্বাচন হলেঅ ১২ জুন ’৯৬ সালে। সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পর ২০০১ পর্যন্ত বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে গেল। তখনই প্রথম খাদ্যে বাংলাদেশ আবার স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস