কাফি কামাল : পুরান ঢাকার প্রাচীন শিল্পনগরী শ্যামপুর-কদমতলী। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দূষণ আর জলাবদ্ধতায় জর্জরিত এক জনপদ। এককালে ডিএনডি বাঁধের অন্তর্ভুক্ত রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বাংশের নিম্নাঞ্চলীয় বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল ঢাকা-৪ নির্বাচনী আসন।
নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা নিয়ে ঢাকা-৫ আসন গঠিত হলে শ্যামপুর-কদমতলীর শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে সীমিত হয়ে পড়ে ঢাকা-৪ আসনের পরিধি। সীমানা পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আকারে ছোট হলেও সমস্যার তীব্রতা কমেনি এলাকাবাসীর।
বন্যানিয়ন্ত্রণে নির্মিত সে ডিএনডি বাঁধ এখন প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতার। ডিএনডি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নিচু এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ।
এলাকাবাসী বুক বেঁধে আছেন ‘ডিএনডি এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ বাস্তবায়নের আশায়। জলাবদ্ধতার সঙ্গে যোগ হয়েছে সুপেয় পানির সঙ্কট। শ্যামপুর-কদমতলীর বিভিন্ন এলাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে পাম্পের পানি সংগ্রহ দৃশ্য নিত্যকার। এছাড়া বিদ্যুৎ সঙ্কট, মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সমস্যা কমেনি।
ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনে মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা রয়েছে বড় দুইদলেই। অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র সালাহউদ্দিন আহমেদ ও আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে বিজয়ী হয়েছিল ধানের শীষ। সপ্তম নির্বাচনে নৌকা। নবম জাতীয় নির্বাচনে পুরনো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী লড়েন নবগঠিত ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ী-ডেমরা) আসনে।
পুরনো ঢাকা-৪ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামেন নতুন দুই প্রার্থী। সেবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান এডভোকেট সানজিদা খানম। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে ছাড় দিতে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন মুন্সীগঞ্জ বিএনপি’র সভাপতি ও সদর আসনের সাবেক এমপি আবদুল হাই। এমপি নির্বাচিত হন সানজিদা খানম।
দশম জাতীয় নির্বাচনে আসনটি জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এমপি হন অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ায় সানজিদা নির্বাচিত হন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি।
আগামী একাদশ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। মহাজোটের শরিক দলের নেতা হিসেবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার সাড়ে তিন বছরে এলাকার উন্নয়নে তার তৎপরতা নিয়ে অভিযোগ নেই খুব বেশি। তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ঢাকা-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি সানজিদার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে দলটির নেতাকর্মীদের একাংশের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক রয়েছে সানজিদার। তবে তার বিরুদ্ধেও বড় অভিযোগ বর্তমান এমপিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে বিরোধ তৈরি। বর্তমান ও সাবেক এমপি’র বিরোধের কারণে ভাগ হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সাইজুল ভিড়েছেন বাবলার শিবিরে। পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে ড. আওলাদ হোসেনের। সানজিদাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কাছে আবেদনও করেছিল শ্যামপুর-কদমতলী আওয়ামী লীগের একাংশ।
অন্যদিকে সানজিদার পক্ষেও রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাংশ। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে দশম জাতীয় নির্বাচনে জোটের প্রার্থীকে ছাড় দিলেও স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি সমান সক্রিয়। একাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যেমন বাবলার মাধ্যমে আসনটি ধরে রাখতে চায় তেমনি মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সানজিদা খানম ও শ্যামপুর-কদমতলীয় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন। ফলে দল এবং জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে মেরুকরণ।
এছাড়াও ঢাকা-৪ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে লড়তে চান নগর আওয়ামী লীগ নেতা ড. আওলাদ হোসেন, শ্যামপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সাইজুল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুনির হোসেন ও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায়।
অন্যদিকে বিএনপি’র আবদুল হাই ফিরে যেতে চান নিজ আসন মুন্সীগঞ্জ সদরে। অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ লড়তে চান ঢাকা-৫ আসনে। ফলে বিএনপিকেও বেছে নিতে হবে নতুন মুখ। এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামতে একদশক ধরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন বিএনপি’র তানভীর আহমেদ রবিন।
সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে রবিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর দেশে ফিরেন ওয়ান-ইলেভেনের সময়। পারিবারিক উত্তরাধিকারের প্রভাবের বাইরেও মামলা-হামলা, কারানির্যাতন সহ্য করে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি করেছেন নিজের শক্ত অবস্থান।
সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দলীয় মনোনয়নের দাবিকে করে তুলেছেন জোরালো। এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্যামপুর থানার সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম। উচ্চশিক্ষিত এ তরুণ নেতা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পর নগর বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে। এলাকায় পারিবারিক প্রভাব ও সাংগঠনিক কারণে তিনিও একজন শক্তিশালী প্রার্থী। এছাড়া ঢাকা-৪ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন বিএনপি’র বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
ঢাকা-৪ আসনে বর্তমান ও সাবেক এমপি’র মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানের পাশাপাশি বিভেদ রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। শ্যামপুর-কদমতলীর দুইটি শিল্প এলাকায় ডায়িং, গার্মেন্ট, আসবাব, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সিমেন্ট, রি-রোলিং মিলস, তামার কারখানা, ফ্যান ফ্যাক্টরিসহ রয়েছে ছোট-বড় প্রায় চারশ’ শিল্প কারখানা।
শিল্পাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ, ভাগ-বাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’দলের নেতাকর্মীরা একাধিকবার জড়িয়েছেন হামলা-পাল্টা হামলায়। শ্যামপুর-কদমতলীর শিল্পাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত মালপত্রের বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই সমস্ত বিরোধের উৎস। শিল্প মালিকদের অভিযোগ ব্যবসার নামে জোর করে ও প্রভাব খাটান ক্ষমতাসীন রাজনীতিক নেতাকর্মীরা।
তবে এমপি বাবলা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মতে এটা নিরেট ব্যবসা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ নির্বাচনের পর বাবলা ও সানজিদার মধ্যে আট দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১ নম্বর শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ করবে জাতীয় পার্টি আর ২ নম্বরে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সে সমঝোতা টিকেনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সানজিদা খানম এমপি’র হাতেই ছিল শ্যামপুর শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ। শিল্প মালিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাবলা এমপি হওয়ার পর শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি পদও আসে তার দখলে। তার ভাগ্নে ও কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব শেখ মাসুক রহমান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা নিয়ন্ত্রণ নেন শিল্পাঞ্চলের।
তবে সানজিদার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের হাতেও রয়েছে শিল্পাঞ্চলের একাংশের নিয়ন্ত্রণ। এ নিয়ে দু’পক্ষই নানা সময়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলেছে। চাঁদাবাজি বা ব্যবসা যেটাই হোক এ ব্যাপারে বাবলার পক্ষে তার ভাগ্নে ও শিল্প মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শেখ মাসুক এবং সানজিদার পক্ষে দেখভাল করেন আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর মেম্বার।
দু’পক্ষের মনরক্ষা করতে হয় শিল্প মালিকদের। বাবলা-সানজিদার বিরোধের আরেকটি ক্ষেত্র এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিচালনা কমিটি নিয়ন্ত্রণ নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব। এ ব্যাপারে দু’পক্ষের বিপক্ষেই এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। ঢাকা-৪ আসনের সীমানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজের তদারকি নিয়েও বিরোধ রয়েছে বাবলা-সানজিদার।
দুইজনই এ উন্নয়ন কাজের তদারক করতে চান। আর তদারকের নেপথ্যে রয়েছে ঠিকাদারি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নীরব চাঁদাবাজির পাশাপাশি মাদক ব্যবসাও শ্যামপুর-কদমতলীর একটি বড় সমস্যা। ওদিকে জুরাইন থেকে শ্যামপুর বড়ইতলা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে পুনর্বাসনের উদ্যোগ ছাড়াই উচ্ছেদ প্রক্রিয়াটি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ওই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের।
পূর্ব কদমতলীর বাসিন্দা নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বৃষ্টি হলেই শ্যামপুর-কদমতলীর একাধিক সড়ক ডুবে যায়। খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের ময়লা পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক লাখ বাসিন্দা। পোস্তাগোলার বাসিন্দা অরবিন্দ দাশগুপ্ত বলেন, শ্যামপুর-কদমতলীতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
সানজিদার আমলে বিআইডব্লিউটিএ’র দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক। কদমতলীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিতাস খাল, শ্যামপুর খাল ও সবুজবাগ খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাবলার আমলে। কদমতলীর বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিক ও তরল বর্জ্যের মাধ্যমে শিল্পদূষণের কারণে আরেক হাজারীবাগে পরিণত হয়েছে শ্যামপুর।
এখানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইপিপি) স্থাপনের দাবি থাকলেও সেটা হয়নি। জাতীয় পার্টি নেতা সুজন দে বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমানে আমলে শ্যামপুর-কদমতলীর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সেচপ্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তা সংস্কার, শ্যামপুর বড়ইতলায় রেলের স্টেশন নির্মাণ, মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ৬ তলা ভবন নির্মাণ ও শ্যামপুর বহুমুখী স্কুলকে কলেজে রূপান্তরে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।
পশ্চিম জুরাইন তুলাবাগিচার বাসিন্দা রইসুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা এবং রাস্তাঘাটের সমস্যাই এলাকাবাসীর ভোগান্তির প্রধান কারণ। পশ্চিম জুরাইনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানে আলম খান বলেন, সন্ধ্যা নামলেই শ্যামপুর-কদমতলীর নানা পয়েন্টে জমে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা। যাদের কারণে এলাকার কিশোর ও তরুণরা বখে যাচ্ছে। ঢাকা-৪ আসনের বর্তমানে এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনে দুইবারের এমপি নির্বাচিত হয়েছি।
শ্যামপুর-কদমতলীর মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মার। বিগত নির্বাচনে আমার প্রধান নির্বাচনী ওয়াদা ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। কদমতলীসহ পুরো ডিএনডি অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার ৫৫৮ কোটি টাকার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে আগামী অক্টোবর মাস থেকে সেনাবাহিনী তার বাস্তবায়ন শুরু করবে। এছাড়া কয়েকটি খাল সংস্কার করেছি। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৪টি পাম্প স্থাপন ও শ্যামপুর-কদমতলীর শতাধিক রাস্তা সংস্কার করেছি।
বাবলা বলেন, আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করলেও বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কারণে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। ফলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে এবং সমঝোতার মাধ্যমে আমি কাজ করি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীর সঙ্গেই আমার সম্পর্ক চমৎকার। বাবলা বলেন, রাজনীতিক হিসেবে আমার কাছে নির্বাচনের প্রস্তুতি একটি ধারাবাহিক বিষয়।
একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে আমি প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিটি গঠন করেছি। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করলে স্বাভাবিকভাবে আমিই মনোনয়নের মূল দাবিদার হবো। জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করলেও তার জন্য আমার প্রস্তুতি রয়েছে।
শিল্পাঞ্চলে চাঁদাবাজি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণসহ সাবেক এমপি সানজিদার সঙ্গে বিরোধের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি বিরোধের মানুষ নই, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার সুসম্পর্কই প্রমাণ করে আমার অবস্থান সঠিক। শিল্পাঞ্চলে চাঁদাবাজির ব্যাপারে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ঠিক নয়। সেখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সমঝোতার ভিত্তিতে ব্যবসা করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সানজিদা খানম কি করে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
সাবেক এমপি ও বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের এমপি এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ২০০৮ সালে দল নমিনেশন দিয়েছিল নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করেছিলাম। পরের নির্বাচনে জোটের প্রার্থীর কারণে ছাড় দিতে হয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে আমি আবারও মনোনয়ন চাইব। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আধুনিক বিশ্বে যখন নারীদের সামনে এগোনোর জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে তখন আমাদের এখানে সবাই নারীদের দাবিয়ে রাখতে চায়। দল থেকে শুরু করে সবখানেই একই পরিস্থিতি।
শ্যামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং অবিভক্ত ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব করেছি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য আমি দীর্ঘদিন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা সবাই আমার সঙ্গেই আছেন। তোফাজ্জল বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে আমার পথচলা শুরু, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই আমি নিরবিচ্ছিন্ন। কোনো সন্ত্রাস-অন্যায় ও চাঁদাবাজিতে নেই। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার রয়েছে আত্মার বন্ধন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নেত্রী সুযোগ দিলে তার সম্মান রক্ষা করতে পারবো।
বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, শ্যামপুরেই আমাদের জন্ম ও বসবাস। আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা শ্যামপুর এলাকার জমিদার ছিলেন। শ্যামপুর-যাত্রাবাড়ী-ডেমরা থেকে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আমার পিতা। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর দলের সিদ্ধান্ত মেনে আমার পিতা ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচন করেছেন। দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমি ঢাকা-৪ আসন থেকে একজন মনোনয়ন প্রার্থী।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আমার অবস্থান তৈরি করেছি। নিজে ৬৫টি মামলার আসামি হয়েছি, তিনবার কারাভোগ করেছি। কিন্তু নেতাকর্মীদের ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকিনি। আমি নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। সাংগঠনিকভাবে ও জনসমর্থনের দিক থেকে আমার পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এবং শ্যামপুর-কদমতলীবাসীর প্রতি আস্থা থেকে থেকে বলতে পারি আমাকে ধানের শীষ প্রতীক দিলে বিজয়ের ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে আ ন ম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার পিতা আফতাব উদ্দীন আহমেদ দীর্ঘসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী আদর্শে রাজনীতিতে নিরবচ্ছিন্ন রয়েছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। দল সুযোগ দিলে ইনশাল্লাহ জয়ী হবো। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি