নিউজ ডেস্ক : পিঠের একটু নিচ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত সংযুক্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিল তৌফা ও তহুরা। গত ১ আগস্ট আলোচিত এই জোড়া শিশুদেরকে পৃথক করেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জোড়া শিশু তৌফা-তহুরা এখন স্বতন্ত্র দুই শিশু। এখন তাদের সবকিছুই আলাদা।
গতকাল শনিবার রাতে তৌফা-তহুরার মা জানান, গত ১০ মাস ধরে তার জোড়া শিশুদের একসঙ্গে কোলে নিয়ে মাসের পর মাস কেটেছে। একসঙ্গে বুকের দুধ খাওয়াতে হতো। চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ আলাদাভাবে কোলে নিয়ে বুকের দুধ খাইয়েছি।
শিশু দুটি আলাদা হওয়ায় আবেগ আপ্লুত হয়ে তাদের মা সাহিদা বলেন, চোখের আড়াল হলেই আমার দুই মা কান্নাকাটি করে। এমনকি একজনকে কোলে নিলেই আরেকজন শুরু করে দেয় কান্না।
তৌফা-তহুরা’র মা বলেন, আগের চেয়ে আমার তৌফা-তহুরা অনেক ভালো আছে। এতো বড় একটি অপারেশনের পরেও আমার দুই মা আমার দিকে দিকে তাকিয়ে মাঝে-মধ্যেই মিষ্টি হাসি দেয়, হাত পা নাড়ায়। ওদের হাত-পায় নাড়ানো দেখে মনে হয়, ওরা যেন তাদের মাকে বলতে চায়, মা আমরা সুস্থ হয়ে গেছি আমাদের কোলে নাও।
তৌফা-তহুরাকে বুকের দুধের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবারও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তৌফা-তহুরা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, আগামী ১০ দিন পর্যন্ত আমাদের এ শঙ্কা থাকবে, আমরা শিশুদুটির বিষয়ে সর্বাত্মক নজর রাখছি, যেন তাদের কোনও ধরনের সংক্রমণ না হয়।
প্রসঙ্গত, ১০ মাস বয়সী তৌফা ও তহুরার জন্ম হয়েছিল পেছনের দিক থেকে সংযুক্ত হয়ে। তারা যেভাবে জোড়া লেগে জন্মগ্রহণ করেছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে পাইগোপেগাস বলা হয়। পাইগোপেগাস শিশু পৃথক করার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম বলেই জানান চিকিৎসকরা। প্রায় নয়ঘণ্টার সফল অপারেশন শেষে তাদের পৃথক করতে সক্ষম হন তারা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের রাজু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম নিজ বাড়িতে জোড়া লাগা দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কোমরের কাছে জোড়া লাগানো শিশু দুটির সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই আলাদা। শুধু প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা একটি। গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢামেকে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করা হয়।গত ১ আগস্ট তাদের শরীর আলাদা করা হলো।
এমটিনিউজ/টিটি/পিএস