শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৪১:২৩

চাঞ্চল্যকর তথ্য! প্রতারণার ভয়ঙ্কর এক নতুন ফাঁদ যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না

চাঞ্চল্যকর তথ্য! প্রতারণার ভয়ঙ্কর এক নতুন ফাঁদ যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না

ঢাকা: প্রতারণার নতুন ফাঁদ: যা আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে!- দুই কোটি মানুষের বসবাস রাজধানীতে রয়েছে হরেক রকমের মানুষ। আবার রয়েছে বিচিত্র পেশার মাঝে অভিনব প্রতারণার নিত্য-নতুন কৌশল। তেমনি একটি ছাগল বিক্রির নামে প্রতারণা। যা আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে। নতুন এ প্রতারণায় ঠকছেন নগরীর সাধারণ মানুষ।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার মহানগর দায়রা জর্জ আদালতের সামনে গাছের নিচে লোকজনের জটলা, জটলার দিকে এগুতেই চারজন ছাগল বিক্রেতাকে দেখা গেছে তিনটি ছাগল নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে। ছাগল তিনটি মোটামুটি বড় সাইজের, দেখতে রুষ্ট-পুষ্ট।

তিনিটি ছাগলের দাম লোকজন জানতে চাইলে, ছাগল বিক্রেতা শাহিন দাম চাইলো তিনটা ছাগল বিশ হাজার টাকা। লোকজন দাম জানার পর মন্তব্য গোস্ত হবে কত কেজি? বিক্রেতা শাহিনের চটকদার উত্তর কম করে হলেও তিনটা ছাগলের পঞ্চাশ কেজি মাংস হবে। সর্বশেষ আদালত প্রাঙ্গণে কর্মব্যস্ত লোকজন আর দাম বলেনি।

বিক্রেতা শাহিনের চটকদার কথা ছিল ঠিক এভাবে, ‘দেশি ছাগল, টাকার অভাবে বিক্রি করে দেব! আমি কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছি। আপনারা দাম বলেন, দামে বনলে আমি দিয়ে দেব। বিক্রি শেষে আমাদের আবার কিশোরগঞ্জ ফিরে যেতে হবে।’!

লোকজন দাম না বলার কারণে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করলো এই বিক্রেতার দল। রাজধানীতে গ্রামের সহজ-সরল গৃহস্থ সেজে অলি-গলি, কাঁচাবাজার, মহল্লা ও আবাসিক এলাকায় ৪/৫টি ছাগল নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় এক শ্রেণির ভ্রাম্যমাণ অসাধু ছাগল বিক্রেতাদের। বিক্রেতারা সংখ্যায় থাকে পাঁচ থেকে ছয় জন। গাঁও-গ্রামের সহজ-সরল কথা আবার কখনো চটকদার কথা বলে এসব ছাগল বিক্রি করে। তবে এক এলাকায় একবার ছাগল বিক্রি করতে পারলে ওই এলাকায় তারা আর কখনো যায় না। কারণ এরা ছাগল বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে।

জানা যায়, এসব ছাগল বেশ কয়েক বছর বাচ্চা দেয়ার পর শরীর শুকিয়ে যায়। গ্রামের বাজার থেকে কম দামে কেনা ছাগীগুলোকে মোটা-তাজাকরণের ইনজেকশন পুশ করলে ছাগীর দুধের ওলান শুকিয়ে যায় ও গায়ের রং পরিবর্তনসহ সাময়িক দুই/তিন দিনের জন্য মোটাতাজা হয়ে যায়। এছাড়া এসব ছাগলের গায়ে চুলের কলপ মাখানো হয়ে থাকে। পরবর্তীতে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে প্রলোভন দিয়ে বিক্রি করে চক্রটি। এই ছাগল কেনার পর এক রাতের মধ্যে বোঝা যায় প্রতারকের খপ্পরে পড়ার বিষয়টি।

রাজধানীর জুরাইন কাঁচাবাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসতিয়াক আহমেদ সুমন এমন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন গত ঈদুল আযহার ঈদের এক সপ্তাহ আগে।

কীভাবে প্রতারিত হলেন জানতে চাইলে ইসতিয়াক বলেন, আমি আমার দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ দেখি ৪টি ছাগলসহ পাঁচ জন বিক্রেতা আমার দোকানের সামনে। আমি অনেকটা কৌতূহল নিয়ে দাম জানতে চাইলাম। এতেই পড়লাম ঝামেলায়, আমি চারটি ছাগল দুষ্টুমির ছলে দশ হাজার দাম বললাম। পরে তাদের কথার জাদুতে চৌদ্দ হাজার বলতেই আমার হাতে চারটি ছাগলের দড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো, দেন টাকা দেন, আপনার কথা আমাদের ভালো লাগছে।

আপনি বলছেন আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে জবেহ করে খাবেন, তাই দিলাম, আপনি বিক্রি করার কথা বললে আমরা দিতাম না। আপনি জিতলেন কমপক্ষে ষাট কেজি মাংস হবে। এমন মিষ্টি কথা বলে টাকা গুনে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সটকে পড়লো প্রতারক দল। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ছাগলগুলোর অস্বাভাবিক পরিবর্তন। দেখে নিজেই আঁতকে উঠি।

পরে বুঝলাম ছাগলগুলোকে ক্ষতিকারক ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। ভয়ে সেই কসাইদের কাছে মাত্র আট হাজার টাকায় ছাগলগুলো বিক্রি করে কোনোমতে উদ্ধার হই। যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের মীরহাজিরবাগের বাড়িওয়ালা শহিদ দুই মাস আগে পড়েন এমন প্রতারণায়। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবারের সকাল বেলা আমার বাড়ির সামনেই চারজন ছাগল বিক্রেতার সঙ্গে দেখা। তারা গ্রাম থেকে এসেছে ছাগল বিক্রি করতে। হাওর এলাকায় বাড়ি নাকি তাদের। বন্যার কারণে ছাগল বিক্রি করতে তাদের ঢাকা আসা।

এমনকি ছাগলগুলো খাসি বলেও তারা চ্যালেঞ্জ করে। পরে ওই ছাগল চক্রের কথার জাদুতে চারটি ছাগল পনের হাজার টাকায় কিনে ফেলি। পরে স্থানীয় কসাই রফিককে ছাগল দেখানোর পর জানতে পারি এগুলো ছাগী ও ইনজেকশনের বিষয়টি। এর আগে আমি বুঝতেই পারিনি যে আমি প্রতারিত হচ্ছি।

প্রতারকের ছাগলের বিষয়ে জানতে চাইলে জুরাইন কাঁচাবাজারের কসাই আ. রশিদ বলেন, এরা এক ধরনের প্রতারক চক্র। অনেকে খাসি ছাগল মনে করে কিনে ফেলে। কারণ ইনজেকশন ও রং দিয়ে ছাগলগুলোকে খাসি হিসেবে তারা বিক্রি করে। এরা ছাগল সম্পর্কে ধারণা নেই এমন কারো কাছে বিক্রির জন্য অবস্থান নেয়। অনেকে ছাগল কিনে ঠকে এবং পরে কসাইদের কাছে নামমাত্র দরে বিক্রি করে কিছু টাকা পাওয়ার শেষ চেষ্টা করে।

প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবিএম মশিউর রহমান বলেন, এটা এক ধরনের প্রতারণা। তবে না জেনে কোনো পণ্য না কেনাই ভালো। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি দেখবো।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে