নিউজ ডেস্ক : ঢাকা-১ (১৭৪) জাতীয় সংসদের আসনগুলোর মধ্যে নানান কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি এক সময়ে ছিল বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও অন্যান্য আসনগুলোর মতো এই আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার। জাতীয় পার্টি চায় ধারাবাহিকতা। আওয়ামী লীগও চায় হাত ছাড়া হওয়া আসনটিকে ফিরে পেতে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবাই হেভিওয়েট। ঢাকা-১ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বেশ কৌতূহলী। কে হবেন নৌকার মাঝি।
ঢাকা-১ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী তিনি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানকে পরাজিত করেন সালমা ইসলাম। জাতীয় পার্টি থেকে সালমা ইসলাম এবারও মনোনয়ন পাবেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির আর কোনো প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে।
আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হওয়া এই আসনটি উদ্ধার করতে নৌকা পেতে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে স্থান পাওয়া সালমান এফ রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যান। জয়ী হয়েছিলেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক বিমান মন্ত্রী আবদুল মান্নানকে পরাজিত করে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তৎকালীন দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। ছাত্র ইউনিয়ন ১৬তম কমিটির সভাপতি ছিলেন আবদুল মান্নান খান। বর্তমানে আবদুল মান্নান খান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আবদুল মান্নান খান এবারও নৌকা প্রতীক চান। তিনি এলাকায় ব্যাপকভাবে কাজ করে চলছেন। মান্নান খান এবারও আশাবাদী।
এ আসনে নৌকা প্রতীক পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ, কর্মিসভা করে চলেছেন। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ তরুণ ভোটারদের মধ্যে তার ব্যাপক পরিচিত রয়েছে। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছিলেন।
১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বর্তমানে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। ঢাকা জেলা প্রশাসক হওয়ায় এবার জাতীয় নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন কিনা তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। তবে বর্তমানে সালমান এফ রহমানের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে নিয়মিতই দেখা যায়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী মো. নূর আলীও রয়েছেন আলোচনায়। ২০০১ সালে তৎকালীন ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন নূর আলী। বর্তমানে তিনি ঢাকা-১ আসনের ভোটার। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এ আসনের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এখন থেকেই হিসাব-নিকাশ কষছেন বিএনপি নেতারা। উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও স্থানীয় নেতাদের মতামত প্রাধান্য দেবে দলটি। আগামী ওই নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে এই আসনটিতে কে পাবেন মনোনয়ন এ নিয়ে নেতাদের মধ্য চলছে খোশ-গল্প।
কৌতূহলের বশে তাদের অনেকেই টানছেন ‘হুদা’ প্রসঙ্গ। সালমান এফ রহমান এবং নাজমুল হুদা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। দীর্ঘদিন দুজনের মধ্যে খুব মান-অভিমান ছিল। কয়েকদিন আগে অবশ্য তাদের অভিমানের সমাধান হয়েছে। সম্পর্কের উন্নতির ফলে একই মঞ্চে বসে সভা করেছেন তারা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বছর নাজমুল হুদা এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারেন। তাকে ঢাকার অন্য একটি আসন ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে ছেড়ে দিলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বা মহাজোটকে ছাড় দেবেন নাজমুল হুদা। আর তা না হলে তিনি এ আসনে লড়বেন বলে জানা গেছে।
এ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেতে জোর প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন সাবেক বিমানমন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান। তিনি ৪ বারের সাবেক এমপি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। এ আসনের বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য তাকেই ধানের শীষ প্রতীকে দেখতে চান। আরেক শক্তিশালী প্রার্থী ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি