রফিকুল ইসলাম রনি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ (১৭৯-ওয়ারী-গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর থানা এবং কোতোয়ালি-বংশালের আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও একক প্রার্থী জাতীয় পার্টিতে। বড় দুই দলই চায় হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।
জাতীয় পার্টি চায় জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও তিন দলের প্রার্থীরা এখন থেকেই জোর প্রচার-প্রচারণায় মাঠে সরব হয়েছেন। কর্মিসভা, সদস্য সংগ্রহ বাড়ানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ সংগঠনকে শক্তিশালী এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান খান দিপু। তিনি বিএনপির প্রার্থী সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পরাজিত করে এমপি হন। এ ছাড়াও এই আসনে নির্বাচনে অংশ নেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় এ আসনে সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। সে সময় আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজী ফিরোজ রশীদের পক্ষে কাজ করেন। সামনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট হলে এবারও তিনি মহাজোটের প্রার্থী থাকবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এবার আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে নারাজ বলে জানিয়েছেন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে দলের প্রয়োজনে যে কোনো সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন। ঢাকা-৬ আসনের জাপার বর্তমান এমপি ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এবারও মহাজোটের একক প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার একটা গভীর সখ্য রয়েছে।
ঢাকার সাবেক এই তুখোড় ছাত্রনেতা ও জগন্নাথ কলেজের সাবেক ভিপি জাতীয় পার্টির প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীর ভিত্তিতে নির্মিত প্রথম ছায়াছবি ‘ওরা ১১জন’ এর অভিনেতা কাজী ফিরোজ রশীদ নির্বাচনী এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক দমনেও নিয়মিত কাজ করছেন। ফলে এলাকায় তিনি ব্যক্তিগতভাবেও জনপ্রিয়।
এবার এ আসন থেকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা-৮ আসনেও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ দুটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিটির দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ গ্রহণ করছেন তিনি।
এ ছাড়াও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের প্রতিটি পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। দুটির যে কোনো একটি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিট চষে বেড়াচ্ছেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু।
জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা থেকে শুরু করে কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করে পালন করে যাচ্ছেন। গত সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত লাভলু এবার জাতীয় নির্বাচনে নৌকা পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এ আসনে বসে নেই মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কাউন্সিলর আবু আহমেদ মান্নাফি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, সূত্রাপুর থানার সভাপতি হাজী মো. শাহিদ। তারা সমানতালে নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গভীর সখ্য গড়ে তুলছেন। কেউ কেউ পৃথক কর্মিসভা, ঘরোয়া বৈঠক করে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করছেন। কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।
হেদায়েতুল ইসলাম স্বপনের জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে আলাদা একটা পরিচিতি রয়েছে। এ ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সালাউদ্দিন বাদল ও কে এল জুবলি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায় (সমর) মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপির গত কয়েকবারের প্রার্থী ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।
চিকিৎসার জন্য তিনি এখন আমেরিকায়। মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় তিনি প্রার্থী হতে না পারলে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন দলের প্রার্থী হবেন। পুরান ঢাকায় খোকার আলাদা ভোটব্যাংক রয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা কয়েকবারের নির্বাচিত এমপি। পিতা প্রার্থী না হলে সন্তানকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়াও এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চান কমিটির সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবুল বাশার। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তরুণ নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. লিটন।
পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক এ ছাত্রনেতা মামলা-হামলা উপেক্ষা করে নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সবার সঙ্গে মিলেমিশে দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করছেন। এ ছাড়াও বিএনপি সমর্থিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নকুল চন্দ্র সাহাও আলোচনায় রয়েছেন। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি