মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি : একাদশের হাওয়া লেগেছে রাজধানীর উত্তরা-খিলক্ষেত এলাকাতেও। এটি ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ১৯১ নম্বর আসন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান এবং ডুমনি ইউনিয়নসহ বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে এ নির্বাচনী এলাকা গঠিত।
আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটের মাধ্যমে শুভেচ্ছাবার্তা ঝুলছে অলিগলিতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এমপি। আসনটি ধরে রাখতে তার পক্ষে নেতা-কর্মীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। এ নিয়ে দলের দুই প্রার্থী ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ ছাড়াও একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী। ছাড় দিতে চায় না জাতীয় পার্টিও। দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুলও ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান তিন দলের বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
আওয়ামী লীগ : এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। নবম ও দশম জাতীয় সংসদে নৌকা নিয়ে তিনিই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন পেতে পারেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
সে মোতাবেক তিনি নির্বাচনী এলাকায় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। ওয়ান ইলেভেনসহ দলের দুর্দিনের এই কাণ্ডারি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সাহারা খাতুনের হ্যাটট্রিক জয়ের প্রত্যাশা করছে।
’৮০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে লড়াকু সৈনিক হিসেবে আলোচনায় আসেন সাহারা খাতুন। হরতাল, অবরোধে সবার সামনে থাকতেন। পিকেটিং করতে যেয়ে পুলিশের মার খেতেন। ’৯১-এর নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি, মনোনয়ন পাননি ’৯৬ এবং ২০০১-এর নির্বাচনেও। কিন্তু তার মিষ্টি হাসিটা কখনো ম্লান হয়নি। কাজ করে গেছেন দলের জন্য।
ওয়ান-ইলেভেনের আগেও উত্তাল আন্দোলনে সাহারা ছিলেন বীরের মতোই। পুলিশের লাঠিপেটা, নির্যাতন কোনো কিছুই তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি। ২০০৮-এর নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করে জয়ী হন। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। তাকে করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সৎ, নিবেদিত ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বস্তরে। উত্তরা এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
এ ছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, দক্ষিণখান ইউপি চেয়ারম্যান ও মহানগরের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন এবং যুবলীগের সাবেক ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সরদার বেলায়েত হোসেন মুকুলসহ আরও বেশ কয়েকজন।
বিএনপি : গত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ছিলেন বিএনপির বর্তমান তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। এবার তাকে খুলনা-৪ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। তিনিও নিজ এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই আসনে এবার নির্বাচন করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার চেষ্টা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম।
তার নামে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে পোস্টার ও ব্যানারও সাঁটানো হয়েছে উত্তরা এলাকায়। দলীয় সবুজ সংকেত পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুমতি নিয়েই আমি মাঠে কাজ করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি, এই আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে পারব। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরাও আমার পক্ষে মাঠে রয়েছেন।
অন্যদিকে এই আসনে মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন তরুণ নেতা যুবদলের উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন। এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ছাত্রদল, যুবদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও বিএনপির একটি অংশ তার পক্ষে রয়েছে। অলিগলিতে, গাড়িতে ঝুলছে তার পোস্টার।
শতাধিক মামলার আসামি হয়ে আড়ালে থেকেই দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন তিনি। দল থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বিএনপির তরুণ নেতা। এসএম জাহাঙ্গীর জানান, দল মনোনয়ন দিলে বিএনপিকে এই আসনটি আমি উপহার দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব।
এ ছাড়াও বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনিও নিজের মতো করে এলাকায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সাবেক ছাত্রনেতা তরুণ ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদীও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক মামলায় তিনি এখন জেলে রয়েছেন। নেতা-কর্মীদের একটি অংশ তার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। ঢাকা ও লন্ডনেও তার যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও উত্তরা থানা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মো. দুলালও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
জাতীয় পার্টি : এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ভোট পেয়ে আসছেন। ’৯১-সালের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বাহাউদ্দিন বাবুল প্রায় ৪০ হাজার ভোট পান। এ ছাড়াও গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বাহাউদ্দিন বাবুল জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই আসনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করে আসছেন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে তিনি পার্টির প্রতিটি ইউনিয়ন, থানাসহ অঙ্গসংগঠনের কমিটি সম্পন্ন করেছেন। নতুন করে সিটি করপোরেশনভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন। বাহাউদ্দিন বাবুল দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে উত্তরখান ও দক্ষিণখানের অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছেন। একাধিক স্কুল ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আগামীতে জাতীয় পার্টি বড় কোনো দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলে এই আসনটি জোটগতভাবে চাইবেন এইচ এম এরশাদ। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসএস