নিউজ ডেস্ক : হেমানজিওমায় আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনির হাতে তৃতীয় অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে। তবে পুরোপুরি ভালো হওয়ার জন্য তার আরও অস্ত্রোপচার লাগবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন।
তিনি জানান, সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তিন ঘণ্টা মুক্তামনির হাতে অস্ত্রোপচার করেন। অপারেশন মোটামুটি সফল। এখন তাকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তার আরও অস্ত্রোপচার লাগবে।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট মুক্তামনির দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার শুরু করা হলেও জ্বরের কারণে পরে তাকে কেবিনে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
মুক্তামনির প্রথম অস্ত্রোপচার হয় গত ১২ অগাস্ট। সেদিন ২০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল প্রায় আড়াই ঘণ্টার জটিল সেই অপারেশনে অংশ নেন।
হাতে বিকট আকৃতির ফোলা নিয়ে গত ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয় মুক্তামনি। তার রোগটি ‘হাইপারকেরাটসিস’ বা স্কিন ক্যান্সার হতে পারে বলে প্রথমে ধারণার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকরা।
সাতক্ষীরার মুদি দোকানী ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে মুক্তামনির রক্তনালীতে অনেকগুলো টিউমার রয়েছে। গত ১২ আগস্ট ওর ডান হাতে অস্ত্রোপচার করে হাত থেকে প্রায় তিন কোজি ওজনের ফুলে থাকা বাড়তি অংশ ফেলে দেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি অপুষ্টিতে আক্রান্ত মুক্তামনিকে পুষ্টিকর খাবার, ‘ফ্রেস ব্লাড’ এবং রক্ত থেকে শুধু ‘প্লাজমা সেল’ পৃথক করে ওর শরীরে পুশ করায় সে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ হয়েছে। তার দেহে আরো অনেক টিউমার রয়েছে। সেগুলো অপসারণ করতে হবে ধীরে ধীরে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয় ডা. সামন্ত লাল সেন গতকাল সোমবার জানিয়েছিলেন, সোমবার মুক্তামনির জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করেন এবং তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য উপযুক্ত মনে করেন। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকেই আগামীকাল তাকে আবারো অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হবে। মেডিক্যাল বোর্ড অবশ্য আজ মুক্তামনির জন্য কিছু তাৎক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং তাকে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।
গত ১২ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচারের আগে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়েছিল মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য। সেখানকার চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেয়েটির শারীরিক অবস্থা দেখে জানিয়ে দেন যে তারা অস্ত্রোপচার করতে পারবেন না। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সিদ্ধান্ত নেয় তারাই মেয়েটির অস্ত্রোপচার করবে এবং এজন্য ২০ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে প্রথমে ৮ আগস্ট বায়োপসি করে। বায়োপসি রিপোর্টে ওর হাতে এবং শরীরের অন্যান্য অংশের রক্তনালীতে বেশ কিছু টিউমার শনাক্ত হয়। ১২ আগস্ট প্রথমে হাতের ফুলে যাওয়া অংশ এবং রক্তনালীর টিউমার অপসারণ করা হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, হেমানজিওমা হলো শিশুদের রক্তনারীর মধ্যে টিউমার, যেগুলো সাধারণত ক্যান্সারপ্রবণ হয় না। এরকম টিউমার শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। ত্বকের উপরিভাগে লাল গুটির মত দেখতে এই টিউমার বেশিরভাগ সময় চিকিৎসা ছাড়াই মিশে যায়।
অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে এই টিউমার বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে ফেটে গেলে তা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে; রক্তপাতও হতে পারে।
আবার টিউমারের আকার ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এটা বিকৃত হয়ে যেতে পারে এবং স্নায়তন্ত্র বা মেরুদণ্ডের ওপর হলে জটিলতা বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
ত্বক ছাড়াও যকৃত ও ফুসফুসের মতো অভ্যন্তরীণ অঙ্গেও হেমানজিওমা হতে পারে।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, দেড় বছর বয়সে মুক্তার ডান হাতে একটি ছোট গোটা দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে বাড়তে বছর চারেক আগে এমন পর্যায়ে যায় যে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।
১২ বছরের এই মেয়েটির আক্রান্ত হাতটি ফুলে দেহের চেয়ে ভারি হয়ে উঠলে তার শরীর শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ওই হাতের কারণে সে সব সময় যন্ত্রণায় অস্থির থাকত বলে জানান তার বাবা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস