ঢাকা: স্ত্রী নাজমুন আরাকে নিয়ে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর অভিজাত শপিং মল পুলিশ প্লাজা কনর্কডে গিয়েছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের এরিয়া ম্যানেজার মোমিন আহমেদ। শপিং মলের দ্বিতীয় তলায় ঘোরাফেরা করার সময় দেখেন তাদের সঙ্গে থাকা সাড়ে পাঁচ বছরের ছেলে তাওসিফুর রশীদ উধাও। অনেক খোঁজাখুজি করেও সেখানে তার সন্ধান মেলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবার মোবাইলে ফোন- ছেলেকে পেতে হলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে।
এত মানুষের সামনে থেকেই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দুঃসাহসিক এই অপহরণ, এরপর রাতভর পরিবার, পুলিশ-অপহরণকারীদের ছোটাছুটি...। শেষমেষ ভোররাতে কৌশলী অভিযানে ধরা পড়ে চক্রটি, উদ্ধার হয় অপহৃত শিশু। আটক করা হয় তিনজনকে।
গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পুলিশ প্লাজা কনর্কডের সব ফ্লোরেই সিসিটিভি লাগানো। শুরুতেই আমরা সিসিটিভিতে দেখি, দ্বিতীয় তলায় বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলে শিশুটি।
শিশুটি যখন এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করছিল তখন দূর থেকে এক যুবক তাকে ফলো করে। কিছুক্ষণ পর তার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে। এরপর ওই যুবক শিশুটিকে কোলে নিয়ে শপিং মল থেকে বেরিয়ে যায়। তবে বের হওয়ার সময় শিশুটি খারাপ কিছু আঁচ করতে পেরেছিল।
ফলে সে বাইরে যেতে চাচ্ছিল না, ওই যুবক শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে আবার ভেতরের দিকে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে কোলে নিয়ে বাইরের দিকে চলে যায়। শিশুটি বাবা বিষয়টি আমাদের বললেও তিনি চাচ্ছিলেন মুক্তিপণ দিয়ে হলেও শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে। আমরা শিশুটির বাবাকে কিছু না জানিয়েই অপহরণকারীদের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথপোকথন প্রযুক্তির সাহায্যে শুনতে থাকি। এরপর আমরা ডিবির সহযোগিতা নেই।
ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, ‘শেষ রাতের দিকে অপহরণকারীদের কথা মতো টাকা নিয়ে রাজধানীর নাবিস্কো, সাতরাস্তা, বিজয় স্মরণী লিংক রোডে ছুটতে থাকেন বাবা। আমরাও তাদের ফলো করি। বিজয় স্মরণীর ফ্লাইওভার থেকে নিচে টাকার ব্যাগ ফেলা হয় অপহরণকারীদের। কিন্তু তাদের সঙ্গে ছিলো না শিশু তাওসিফুর।
তখন আমরা দুই দিক থেকে অপহরণকারীদের ঘিরে ফেলি। এক পর্যায়ে ধরা পড়ে একজন অপহরণকারী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় শিশুটিকে তারা রাজধানীর মধ্য কুনিপাড়ার একটি মেসে রেখেছে। রাতেই সেখানে অভিযান চালাই আমরা। অপহরণকারীদের সঙ্গে সেখানে আমাদের গোলাগুলি হয়। এতে ডিবির এসি সাকলাইন গুলিবিদ্ধ হন। পরে ভোর রাত চারটার দিকে মেস থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। আটক করা হয় আরো দুই অপহরণকারীকেও।
তবে আরো দুই-তিনজন অপহরণকারী পালিয়ে গেছে বলে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃতরা। এখন তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় অপহরণের মামলাও হয়েছে।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস