নিউজ ডেস্ক : রোববার দুপুরে চাটমোহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরিফুল ইসলাম তার কক্ষে বসে ছিলেন। হঠাৎ একটি মেয়ে তার কক্ষে প্রবেশ করে ‘ভাইয়া’ বলে ডাক দেয়। আঁতকে ওঠেন তিনি।
চিনতে পারছেন না মেয়েটিকে। আবারও ডাক দিয়ে বলতে থাকে, ‘চিনতে পারছেন না ভাইয়া’!
এ সময় তিনি বলে ওঠেন ‘তুমি সুমি না’। তক্ষুণি তাকে জাপটে ধরে মেয়েটি।
সে বলে- ‘ভাইয়া বাড়ি যাচ্ছি, দোয়া করবেন।’
যেন সত্যি ভাইকে ছেড়ে যাচ্ছে বোন। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘ ৫ বছর গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় গত ৩ ডিসেম্বর পৌর শহরের ছোট শালিকা মহল্লার (কালীনগর) আবদুস সোবাহান বিচ্ছুর বাড়ি থেকে সুমিকে গৃহবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। গত ১৪ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ছিল সুমি। এখন পুরো চেহারা পাল্টে গেছে তার।
রোববার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেয়ার পর ডাক্তার, নার্স, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলল না সুমি ও তার পরিবার।
মাথায় ক্লিপ দিয়ে চুল বাঁধা, গলায় মালা। গালে টোল, মুখে একগাল হাসি। নতুন জামাকাপড় পড়ে বাবা-মার সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেল সুমি।
খবর পেয়ে থানায় আসেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি কেএম বেলাল হোসেন স্বপন। সবাইকে পা ছুঁয়ে ছালাম করে বিজয়ের মাসে বিজয়ীর বেশে মা-বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরল সুমি।
অথচ আজ থেকে ১৫ দিন আগেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা টয়লেটে বন্দি ও মুখে গামছা ঢুকিয়ে মারধর করা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত গৃহকর্ত্রী ফেরদৌসি বেগমের আদেশ মোতাবেক কাজ করে যাওয়া, না খাইয়ে রাখা! এমন অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে।
প্রসঙ্গত, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বিলব্যাসপুর গ্রামের হতদরিদ্র শফিকুল ইসলাম ও আঞ্জুয়ারা খাতুন অভাবের তাড়নায় সুমিকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে রাখেন আবদুস সোবাহান বিচ্ছুর বাসায়। এরপর তাকে ৫ বছর ধরে গৃহবন্দি করে নির্যাতন করা হয়। পরে পুলিশ তাকে শীর্ণকায় অবস্থায় উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় সুমির মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ বিচ্ছু দম্পতিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস