নিউজ ডেস্ক: ‘নতুন বছরে ছাত্রদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২০১০ সাল থেকে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছেন যে শিক্ষামন্ত্রী তিনি শিক্ষকদের আনন্দ দিতে জানেন না। শিক্ষকদের নিরানন্দে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনন্দ থাকে না। ছাত্ররাও আনন্দে নেই।'
এভাবেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন গত ৭ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত রোববার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে নেমেছেন তারা। সোমবার আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অাজ অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বারডেম হাসপাতালের অধ্যাপক এম এ সাঈদ। শিক্ষকরা বলছেন, নতুন বছরে বিদ্যালয়ে নতুন বই বিতরণ করা হয়, নতুন বই বিতরণে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে আলাদা আনন্দ কাজ করে। কিন্তু এবার আমরা সেই আনন্দে থাকতে পারিনি। কারণ আমরা দীর্ঘদিন নিরানন্দে। আমরা বিনা বেতনে নিয়োজিত আছি। আমাদের বেতন দেয়ার ব্যাপারে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই।
নূর-ই মাহমুদা নামে এক শিক্ষিকা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা তো এখানে আসতে চাইনি। আমাদের এখানে কারা আসতে বাধ্য করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই থাকতে চাই। কিন্তু সে পরিবেশ রাখা হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের মানুষ করতে কষ্ট হয়, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। বিনা বেতনে আর কতদিন? আমাদেরও তো জীবন? এটা একটু ভাবলেই সমাধান আসে।'
নতুন বছরের প্রথম দিন সোমবার রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০১৮’ উদযাপন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু মেধার দিক থেকে গরিব নই। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্বজুড়ে সুনাম রয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে আমরা এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এ বছর সারাদেশে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ১৬০টি বই তুলে দেয়া হবে। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। এছাড়া ৯ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ব্রেইল বই এবং ৫টি নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার বই দেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ ধরে কুষ্টিয়া থেকে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, বই কাদের হাতে তুলে দিব? সেই বই কারা পড়াবে? যারা পড়াবে তারা আজ অভুক্ত। সরকার, মন্ত্রণালয় আমাদের অভুক্ত রেখেছে। শিক্ষকরা অশান্তিতে থাকলে শিক্ষালয়ে কি আনন্দ থাকে? ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, আশা করছি আন্দোলন সফলতা পাবে। যদিও সংশ্লিষ্ট কেউ এখনও আশ্বাস কিংবা সাক্ষাৎ দেননি।
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় রায় বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ তারাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ লজ্জা কার? আমরা অপেক্ষায় আছি। সরকার আমাদের দিকে চাইবে। সরকার নমনীয় হবে। আমাদের উদারতা, ভদ্রতাকে দুর্বল ভাবলে ভুল হবে। জীবন যাবে কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এবার ঘরে ফিরব না।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস