সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০২:৫৮:০১

কারাগারে তুমুল বিতণ্ডা : মরে গেলেও এ কাজ করবেন না বলে খালেদা জিয়ার হুমকি

কারাগারে তুমুল বিতণ্ডা : মরে গেলেও এ কাজ করবেন না বলে খালেদা জিয়ার হুমকি

ঢাকা: বেগম জিয়াকে কারা পোশাক পরাতে চান কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কারা পোশাক কিছুতেই পরবেন না বিএনপির চেয়ারপারসন। সোমবার সকালে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে এনিয়ে হয়ে গেল তুমুল বিতণ্ডা।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, একজন দন্ডিত ব্যক্তি জেলে এলে তাঁকে অবশ্যই কারা পোশাক পরতে হবে। দণ্ডিত পুরুষদের জন্য কারা পোশাক হলো সাদা ফতুয়া ও পায়জামা। নারীদের জন্য কারা পোশাক হলো সুতির সাদা শাড়ির সংগে কালো পার। কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ডিত কয়েদীদের জন্য এই পোশাক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিনই তা বেগম জিয়া ফেলে দিচ্ছেন। রোববার বিকেলে বেগম জিয়া ডিভিশন প্রাপ্ত হলে তাঁর কক্ষ পরিবর্তন করা হয়। তাঁকে পুরাতন কারাগারে শিশুওয়ার্ডের দোতলায় নিয়ে আসা হয়। এসময় কারাগারের একজন কর্মকর্তা বেগম জিয়াকে কারা পোশাক পরতে বলেন। তখন বেগম জিয়া খুবই উত্তেজিত হয়ে বলেন ‘আমি মরে গেলেও এই পোশাক পরব না। এগুলো তোমরা পর। যারা আমাকে জেল দিয়েছে তাদের পরাও।’

সোমবার সকালে কারাগারে একাধিক কর্মকর্তা বেগম জিয়ার সঙ্গে তার কক্ষে দেখা করে কারা পোশাক পরার অনুরোধ করলে, উত্তেজিত হয়ে উঠেন তিনি। সবাইকে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারাগারের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন ‘উনি সম্মানিত ব্যক্তি। ওনাকে কারাগারের নিয়মনীতি মানতে হবে। আমরা চাই না তাঁকে কোনো কিছু বাধ্য করতে।’

উল্লেখ্য যে, ১১টি বিষয় সামনে রেখে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার করা হয়েছে।

আদালত রায়ে বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স, তাঁর শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। আসামি তারেক রহমান, মমিনুর রহমান ও ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী পলাতক রয়েছেন। তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর সাজা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

খালেদা জিয়াসহ সব আসামির বিরুদ্ধে এতিম তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, মমিনুর রহমান ও ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা জরিমানা করা হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে—উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, ১১টি বিষয় সামনে রেখে এই বিচার করা হয়েছে।

১১টি বিষয় হল-

এক. প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল কি না।
দুই. ওই অ্যাকাউন্টে সৌদি আরব থেকে টাকা জমা হয়েছিল কি না।
তিন. জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে একটি ট্রাস্টি গঠন করা হয়েছিল কি না।
চার. জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে গুলশানের সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল কি না।
পাঁচ. ওই ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের টাকা স্থানান্তর হয়েছিল কি না।
ছয়. জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা স্থানান্তর করে তারেক রহমান ও মমিনুরের অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়েছিল কি না।
সাত. ওই টাকা কাজী সলিমুল হক কামালের নামে তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থায়ী হিসাব (এফডিআর) করা হয়েছিল কি না।
আট. সেখান থেকে আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছিল কি না এবং তা আত্মসাৎ হয়েছে কি না।
৯. আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন কি না।
১০. রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে কি না। এবং
১১. অপরাধ করে থাকলে আসামিরা শাস্তি পাবেন কি না।

আদালত বলেন, এই ১১টি বিষয় সাক্ষ্যপ্রমাণে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং এই মামলায় দাখিলকৃত দলিলপত্র প্রমাণ করে যে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।-বাংলা ইনসাইডার
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে