বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০১:০১:৪০

যেভাবে জামিন হচ্ছে খালেদা জিয়ার..

যেভাবে জামিন হচ্ছে খালেদা জিয়ার..

ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি আজ বুধবার পাওয়া গেলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জামিন আবেদন করা হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন আজ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের কপি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাওয়ার সাথে সাথে আপিল করা হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, রায়ের সার্টিফাইড কপি আজ বেলা ২টার পর পাওয়া যাবে বলে আদালত থেকে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া গেলে কাল আপিল ও জামিন আবেদন করতে পারব। তিনি আরো বলেন, আপিল আবেদনের পরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যদি প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি হয় তাহলে তা প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হবে।

তিনি বলেন, আমরা ওকালতনামায় বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নিতে এসেছিলাম। কারণ আমরা শুনেছি তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট আসেনি। তাই ওকালতনামা জেল সুপারের কাছে রেখে এসেছি।

রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে খালেদা জিয়ার অন্যতম প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কপি পাওয়ার পর আমরা হাইকোর্টের সেকশনে আপিল সাবমিট করব। এরপর শুনানির তারিখের জন্য আদালতে মেনশন করব। এরপর আপিল ও জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আদালতের তালিকায় আসবে। তিনি বলেন, নি¤œ আদালত তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে। আশা করি হাইকোর্ট থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পাবো।

তিনি অভিযোগ করে, আমাদের মনে হচ্ছে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন পর্যন্ত বা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত জেলে রাখার নীলনকশা করছে। বিএনপি যতই নমনীয় থাকুক একপর্যায়ে অশান্ত হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তারাও বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে। তাকে মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন জেলে রাখা যাবে না। তাকে দীর্ঘদিন জেলে রাখা হলে দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা শুনেছি বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে রায়ের বিরুদ্ধে আমরা বৃহস্পতিবারই আপিল দায়ের করব। আপিলের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করা হবে।

এ দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, আদালতের রায়, এজাহার, সাক্ষী, জেরা, অভিযোগপত্র, ফরোয়ার্ডিংসহ সব কাগজ মিলে ছয় হাজার পৃষ্ঠার ওপরে অনুলিপি হবে। ওই অনুলিপি কোর্ট ফোলিওতে প্রিন্ট হয়ে গেছে। পাঁচ থেকে ছয়জন অনুলিপিকারক এ নিয়ে কাজ করছেন। কোনো ভুলভ্রান্তি হচ্ছে কি না, তারা তা মিলিয়ে দেখছেন।

তিনি বলেন, কারেকশনের পরে প্রধান অনুলিপিকারক চূড়ান্তভাবে মিলিয়ে দেখবেন কোনো ভুল হলো কি না। এর পরে তিনি সেই অনুলিপিতে স্বাক্ষর করবেন। তার স্বাক্ষরের পরে ওই আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বাক্ষর করবেন। এর পরে অনুলিপিতে কোর্ট ফি লাগানো হবে। আর সব কাজ সম্পন্ন হলেই এ মামলার রায়ের কপি পাওয়া যাবে।

আইনজীবীরা জানান, রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরে খালেদা জিয়া নি¤œ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন এবং আপিল করার সাথে সাথে তিনি জামিন আবেদনও করতে পারবেন। আইনজীবীরা জানান, রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল আবেদন করার নিয়ম। আর হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। যে মুহূর্তে রায় দেয়া হয় ঠিক সে সময় থেকে গণনা শুরু হয়। তবে রায়ের সার্টিফাইড কপি যত দিন না পাবেন তত দিন পর্যন্ত এই ৬০ দিনের সময় গণনা শুরু হবে না।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন ওই কারাগারে আছেন। এ ছাড়া এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া মামলার অপর চার আসামিকেও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর আসামিদের প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে