শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৪৬:৫৮

কারাগারে খালেদা জিয়ার প্রাপ্য সব সুযোগ সুবিধা যেন নিশ্চিত করা হয়: টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী

কারাগারে খালেদা জিয়ার প্রাপ্য সব সুযোগ সুবিধা যেন নিশ্চিত করা হয়: টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: আবুধাবী থেকে বেগম খালেদা জিয়ার খোঁজ খবর নিলেন প্রধানমন্ত্রী।  ইতালি ও ভ্যাটিকান সফর শেষে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুধাবী যান। তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সেখানে থাকেন। মেয়ের বাসায় দুই দিন থেকে আজ (শনিবার) দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র গুলো জানায়, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।  বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মধ্যে কারাগারে বেগম জিয়া সম্পর্কেও খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী।  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে বেগম জিয়া সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন।  কারাগারে প্রাপ্য সব সুযোগ সুবিধা তাঁকে যেন দেওয়া হয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী।  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রাপ্য সুযোগের চেয়েও বেশি সুযোগ-সুবিধা বেগম জিয়াকে দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বিএনপির দুর্নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের কথা বলার পরামর্শ দেন। নির্বাচন, আদালত এসব বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য না করার নির্দেশ দেন। দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী আগামী রোববার বা সোমবার সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
 
পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

এ সময় এজলাসে মামলার আসামি খালেদা জিয়া, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে খালেদা জিয়াই প্রথম দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হলেন। মামলার ১০ বছর পর এ রায় এলো।

এ মামলায় ২৩৬ কার্যদিবসে ৩২ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ২৮ কার্যদিবস ধরে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ১৬ কার্যদিবস উভয়পক্ষের (দুদক ও আসামিপক্ষ) যুক্তিতর্ক শুনানি হয়।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করেন।

এতে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মমিনুর রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, সাঈদ আহমেদ ও গিয়াস উদ্দিনকে আসামি করা হয়। তদন্তে সাঈদ আহমেদ ও গিয়াস উদ্দিনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। তদন্তে নতুন করে আসামি হিসেবে যুক্ত হন ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় একটি হিসাব খোলেন। একটি বিদেশি সংস্থা ১৯৯১ সালের ৯ জুন ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান হিসেবে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা দেয়।

কিন্তু তহবিলের ওই টাকা দীর্ঘ দুই বছর কোনো এতিমখানায় না দিয়ে জমা রাখা হয়। এর পর জিয়া পরিবারের তিন সদস্যকে (তারেক, আরাফাত ও মমিনুর) দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করে এর নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে ঠিকানা হিসেবে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের ৬ নম্বর মইনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। ট্রাস্ট গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা মানা হয়নি বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

মামলায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের টাকা ১৯৯৩ সালে দুভাগে ভাগ করে ট্রাস্টের বগুড়া ও বাগেরহাট শাখার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, যা থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা দিয়ে ট্রাস্টের নামে বগুড়ায় প্রায় তিন একর জমি কেনা হয়। কিন্তু অবশিষ্ট টাকা এতিমখানায় ব্যয় না করে দীর্ঘ ১৩ বছর ব্যাংকে জমা রাখা হয়। পরে তা সুদাসলে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭ টাকায়।

দুদকের অভিযোগ, ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও স্বজন মমিনুর রহমানকে দিয়ে তিন কিস্তিতে ৬টি চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা তুলে প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করেন। এর পর বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক, সৈয়দ আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও শরফুদ্দিন আহমেদের প্রাইম ব্যাংকের নিউ ইস্কাটন শাখার ব্যক্তিগত হিসাবের মাধ্যমে ওই টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন।

এর প্রায় ৫ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরু করেন।

এ মামলায় খালেদা জিয়া অস্থায়ী জামিনে ও অপর দুই আসামি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে