ঢাকা : দ্বিতীয় ধাপে আইনি লড়াই, জামিন প্রশ্নে ফয়সালার অপেক্ষা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আইনি লড়াইয়ের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হচ্ছে আজ। গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বের শুরুর দিকেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নেরও ফয়সালা হবে। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার
হাইকোর্টে আপিল করেন বিএনপি প্রধান। আপিলে তার জামিনের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশও চাওয়া হয়েছে। আপিলের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে আজ। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হবে।
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
সোমবার এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের পরদিনই হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। তখন আদালত আজ শুনানির দিন ধার্য করে। এদিকে গত রাত পর্যন্ত দুদককে আপিলের কপি দেননি খালেদার আইনজীবীরা। আজ সকালে তা দেয়া হতে পারে।
আজ এ আপিলের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে শুনানির দিনে শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নন সারা দেশেরই দৃষ্টি থাকবে হাইকোর্টের দিকে। বিশেষকরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন প্রশ্নে উচ্চ আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন সেদিকেই নজর রাখছেন সবাই। বিএনপির নেতা ও আইনজীবীরাও তাকিয়ে আছেন আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে। আইন সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মামলায় আপিল নিষ্পত্তিতে আরো সময় লাগবে।
এখন প্রাথমিকভাবে দুটি প্রশ্নই বড় হয়ে ওঠছে। ১. হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে কি-না? ২. নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয় কি-না? নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের রায়ের পর থেকেই আলোচনা চলে আসছে, তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না? আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের দুই ধরনের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এখন বিষয়টি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন এবং আদালতের ওপর। অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হদা বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করবে বললেও এটা বলেছেন যে, বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এদিকে, আপিলে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আইনের ধারা লঙ্ঘন করে খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। যে ধারায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে সে ধারা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আপিলে বলা হয়, নিম্ন আদালত প্রতারণাপূর্ণভাবে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে বলেছেন যে, ‘আসামি বেগম খালেদা জিয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার বিধান মোতাবেক আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য প্রদানের সময় নিজ জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, খালেদা জিয়া ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নির্বিচারে গুলি করে প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে।
এগুলো কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি? শেয়ারবাজার লুট করে লাখো কোটি টাকা তছরুপ হয়ে গেল। নিঃস্ব হলো নিম্ন আয়ের মানুষ। ... এই মামলায় আমাকে কেন অভিযুক্ত করা হয়েছে তাও আমার বোধগম্য নয়। আমার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার যে, এর প্রতিটি মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে।
সবগুলো মামলাই করা হয়েছে অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে।’ আপিলে বলা হয়েছে, সাজা এবং দণ্ড দেয়া হয়েছে জবানবন্দির এই ধরনের বিকৃতির ভিত্তিতে। যে কারণে এ সাজা বাতিলযোগ্য।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গতকাল বলেন, আমরা আশা করছি আদালত খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করবেন এবং তিনি মুক্তি পাবেন। তার অন্য মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে আর কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস