ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের একটি যুক্তির প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য আগামী রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের যে যুক্তিতে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি পেছালো :-
জামিন শুনানির সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু যুক্তিতে তার জামিন চাচ্ছি। আমরা আবেদনে জামিন চাওয়ার কারণগুলো উল্লেখ করেছি। তাই তার জামিন মঞ্জুর করা হোক।’ এরপর জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি আদালতকে বলেন, ‘তার আইনজীবীরা (খালেদা জিয়ার) আজ সকাল ৯টার পর জামিন আবেদনের কপি আমাদের দিয়েছেন। আবেদনটি পড়তে সময় প্রয়োজন। তাই আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী সপ্তাহের কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) রাখা হোক। এখানে দুদকের আইনজীবী আছেন। তিনিও বলুক।’
তখন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘আমরাও সকাল সাড়ে ৯টার সময় জামিন আবেদনের কপি পেয়েছি। অনেক বড় একটি আবেদন। প্রস্তুতি নিতে সময় প্রয়োজন। তাই আমাদেরকে সময় দেওয়া হোক।’
এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলী রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আইনজীবীদের শুনানির বিরোধিতা করে বলেন, ‘তারা অযথা সময় চাচ্ছেন। আপিল গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে একই সময় জামিন শুনানি হয়। এমন অনেক নজির রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আজকেই শুনানি হোক।’
এরপর আদালত বলেন, জামিন আবেদনটি পড়ার জন্য তারা (রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক) যুক্তিসঙ্গত সময় পাওয়ার দাবিদার। আমরা তাদের সময় দিচ্ছি। একইসঙ্গে জামিন শুনানির জন্য রবিবার দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করছি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণযোগ্যতার শুনানি শুরু হয় বেলা ১২টা ১ মিনিটে। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। আর দুদকের পক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
তবে এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার থেকেই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে কয়েক দফা কথাকাটাকাটি, হাতাহাতি ও উচ্চবাচ্য হয়। এ কারণে বিচারপতিরা কয়েকবার তাদের সতর্ক করেন।
কিন্তু এরপরেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে আইনজীবীদের শান্ত করতে বলে এজলাস ত্যাগ করেন। পরে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণযোগ্যতার শুনানিতে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবী, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অপর আসামি তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানাও করা হয়। রায়ের পর থেকেই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে রাখা হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস