মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৮:০৭:৫৭

অবশেষে জানা গেল এমন দুর্দিনে যে কারণে খালেদার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ড. কামাল!

অবশেষে জানা গেল এমন দুর্দিনে যে কারণে খালেদার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ড. কামাল!

ঢাকা: অবশেষে জানা গেল এমন দুর্দিনে যে কারণে খালেদার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ড. কামাল! জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রধান আইনজীবী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পেছনে তিনি যে কারণ তুলে ধরেছেন তা ছাড়াও অন্যে একটি কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন একজন রাজনীতি বিশ্লেষক।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হয়েছেন ২০ দিন হতে চললো। এখনো তার জামিনের বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেন নি খালেদার আইনজীবীরা। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে খালেদার আইনজীবীদের যোগ্যতা নিয়ে। অনেকেই বলছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইনী লাড়াইয়ের চেয়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিকে বেশি মনোযোগী। যে কারণে দীর্ঘ হতে পারে খালেদার কারা জীবন।

এমন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করা হয় ড. কামাল হোসেনকে।

ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের আইনি দুনিয়ায় একটি প্রসিদ্ধ নাম। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদেরও অন্যতম একজন এবং রাজনৈতিক দল গণফোরামের প্রধান।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মতিঝিলের টয়োটা টাওয়ারে ড. কামাল হোসেনের ল’চেম্বারে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার আবদুর রেজাক খান, আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী।

জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরাসরি ড. কামল হোসেনকে খালেদার প্রধান আইনজীবী হওয়ার অনুরোধ করেন। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া এমনটি চাইছেন বলেও জানানো হয় তাকে।

উত্তরে ড. কামাল বলেন, আমি তো আসলে ক্রিমিনাল কেস নিয়ে কাজ করি না। তাছাড়া ক্রিমিনাল কেসের বিষয়ে আমার ধারণাও অনেক কম। তাই ইচ্ছা থাকা সত্তেও এ কেসটি আমি নিতে পারছি না বলে দুঃখিত।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে না দাড়ালেও তার প্রতি আমার সমোবেদনা থাকবে। তাছাড়া বিএনপির অনেক আইনজীবী রয়েছেন তারা এবিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন ড. কামাল।

এসময় মামলাটির আইনি বিষয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের বেশ কিছু পরামর্শও দেন বলে জানা গেছে।

প্রায় ১ ঘণ্টা চেম্বারে অবস্থান করার পর দুপুর ১২টায় বেরিয়ে যান ফখরুল।

বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে জামিন আবেদনের শুনানির দিন সন্ধ্যায় কারাগারে যান খালেদা জিয়ার পরিবারের ৪ সদস্য। তাদের কাছে ড. কামাল হোসেনকে এ মামলার আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানান বেগম জিয়া। সেই সাথে ড. কামাল রাজি না হলে অন্য একজন আইনজীবীর কথাও বলে রাখেন খালেদা।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে না জানালেও এর প্রেক্ষিতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

এদিকে ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে পক্ষে-বিপক্ষে নানান কথা উঠতে থাকে। অনেকে মনে করেন খালেদা জিয়ার এই দুর্দিনে ড. কামালের উচিত ছিলো তার পাশে দাড়ানোর। অনেকে আবার বলছেন ড. কামাল ঠিক কাজটিই করেছেন। তাদের মতে, এ মামলায় খালেদার আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব নিলে ড. কামালের রাজনৈতিক আর্দশ প্রশ্নবিদ্ধ হতো।

তবে বিগত দিনে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যারা কাজ করেছেন এরকম একজন রাজনীতি বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব মেনে না নেওয়ার পেছনে অন্য একটি কারণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ড. কামাল ক্রিমিনাল কেসে কাজ করেন না বা কম জানেন এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। ড. কামাল আদালতে দাড়ালেই মামলার মোড় ঘুরে যেতে বাধ্য। তবে তিনি সেটা করবেন না কেবল তারেক রহমানের জন্য।

তার মতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এখন তারেক রহমান। সেক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী হলে তারেক রহমানের কর্তৃত্বের গন্ডির মধ্যে এসে যাবেন ড. কামাল। যা তিনি কখনোই চান না।

তাছাড়া ড. কামাল ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা করলেও তারেক রহমানকে তিনি অপছন্দ করেন বলেও জানান এই রাজনীতি বিশ্লেষক।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন নিম্ন আদালত।

এ মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন মামলার বিচারক ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।

মামলার অন্যান্য ৫ আসামীকেও ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সাজা প্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলেন- সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান। মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

রায়ে সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেকের ২কোটি ১০লক্ষ ৭১ হাজার টাকা সমপরিমান জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।

এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আপিল শুনানিতে খালেদার অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদার জামিন আবেদন করা হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি জামিন শুনানি শেষ করেন আদালত। তবে রায়ের নথি আসার পর জামিন আবেদনের আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান আদালত।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে