আল-আমিন : ‘রওনক ও মাইশা। দু’জনই একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দু’জন থাকেন দুই এলাকায়। মোবাইল ফোনে পরিচয়। অতঃপর প্রেম। তাদের মধ্যে কথা ছিল পড়াশেুানা শেষে তাদের বিয়ে হবে। কিন্তু, মাইশা সুমন নামে আরেক যুবকের প্রেমে মজে যায়। আর তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রওনক।
কিন্তু, মাইশা তার সঙ্গে আর পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়নি। কিন্তু পিছু ছাড়েনি রওনক। প্রত্যেকদিন তাকে ফোন দিতো এবং তার বাসায় যেতো। পুলিশের ধারণা, প্রেমে বাধা দেয়ার কারণে রওনককে হোলি উৎসবে যোগ দেয়ার নামে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নারী ও প্রেমকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার সময় যারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের ধরা গেলে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কার উস্কানি আছে এবং কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তার পূর্ণ তথ্য জানা যাবে।
বৃহস্পতিবার সকালে কোতোয়ালি থানাধীন লক্ষ্মীবাজার ভিক্টোরিয়া পার্ক গলিতে রওনককে কে বা কারা পিটিয়ে আহত করে। এ সময় তার বন্ধু আরিফ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহতের মা বৃহস্পতিবার রাতে বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করে খুনের সঙ্গ জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আবেদন করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জানে আলম মুন্সী গতকাল বিকালে জানান, আমাদের ধারণা ঘটনাটি প্রেম ও নারীঘটিত। রওনকের সঙ্গে মাইশার সম্পর্ক ছিল। তবে মামলার বাদী কাউকে চিহ্নিত করে আসামির নাম উল্লেখ করেনি। এজন্য আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যারা ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে ঘটনার মূল ক্লু জানা যাবে। এও জানা যাবে কার উস্কানি এবং কী কারণে ওই কলেজছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আছে। ঘটনার পর কয়েকজন পলাতক আছে। তাদের ধরার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোতোয়ালি থানার এক এসআই জানান, দুইবছর ধরে রওনকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মাইশার। তবে গত ৩ মাস ধরে তাদের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি। তবে রওনক মাইশাকে সবসময় কল দিতো ভাঙা প্রেম জোড়া লাগাতে।
সূত্র জানায়, ঘটনার পরই পুলিশের পক্ষ থেকে মাইশা এবং রওনকের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। গত ৩ মাসে মাইশা রওনককে আগে একবারও কল দেননি। শুধু রওনক মাইশাকে কল দিয়েছে। কলের স্থায়িত্ব ছিল ১ থেকে দেড় মিনিট। কিন্তু, বৃহস্পতিবার ঘটনার দিন ৩ মাস পর প্রথম মাইশা আগেই কল দিয়েছিল রওনককে।
কললিস্টে দেখা দেখা গেছে যে, সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে মাইশা রওনককে ফোন দিয়ে জানান যে, ‘আজ হোলি উৎসব। তুমি যদি এই হোলিতে যোগ দিতে চাও তাহলে আসতে পারো। রওনক খুশি হয়ে লক্ষ্মীবাজারের মাইশার বাসার সামনে যায়। এ সময় তাকে কে বা কারা পিটিয়ে হত্যা করে।
সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টিও তদন্ত করছে পুলিশ। মাইশার সঙ্গে সুমনের নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার কারণে কারও সঙ্গে রওনকের ব্যক্তিগত শত্রুতা হয়েছিল কী-না তা খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মাইশা স্বীকার করেছেন যে, রওনক তাদের বাড়ির সামনে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কথা হয়েছে।
এ সময় কে বা কারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে তাদের নাম জানাতে পারেনি মহিলা। পুলিশ ঘটনার দিন হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীকে চিহ্নিত ও তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিহতের খালু আবদুল জব্বার জানান, এ ঘটনায় রওনকের বান্ধবী মাইশার হাত আছে বলে তিনি দাবি করেন। সূত্র জানায়, রওনক আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কামরাঙ্গীচরের রনি মার্কেটের পাশের খলিফা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকত। রওনকের বাবার নাম শহীদ মিয়া। গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার দোহার এলাকায়। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস