ঢাকা : আলো না থাকায় রাতে ভুতুড়ে রূপ ধারণ করে মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার। এ অবস্থায় রাত দশটার পর ফ্লাইওভারটিতে উঠলে গা ছমছম করে। অজানা আতঙ্ক ভর করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত বাতিগুলো অনেক দিন ধরে অকেজো।
ফলে রাতের বেলা অন্ধকার থাকে ফ্লাইওভারটি। রাতের অন্ধকার দূর করতে অকেজো হয়ে পড়া বাতিগুলো ঠিক করে সচল রাখতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন ছিনতাইয়ের প্রবণতা বাড়ছে তেমনি ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধনের সময় সবগুলো বাতি সচল ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রায় সবগুলোই অকেজো হয়ে গেছে। নিয়মিত চলাচলকারীরা জানান, ফ্লাইওভার চালুর সময় বাতিগুলো সচল ছিল। কিন্তু পরে সঠিক নজরদারির অভাবে ক্রমান্বয়ে সবগুলো বাতিই অকেজো হয়ে পড়েছে।
তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক মাস পর বাতির স্ট্যান্ডগুলোও ফ্লাইওভারে পাওয়া যাবে না। এজন্য সঠিক নজরদারির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। গত দু-দিন সরজমিন ফ্লাইওভারটিতে দেখা যায়, রমনা থানা থেকে তেজগাঁও সাত রাস্তা পর্যন্ত মৌচাক-মগবাজার সচল ফ্লাইওভারের সবগুলো বাতি অচল।
পুরো ফ্লাইওভারে স্থাপিত শতাধিক বাতির মধ্যে মাত্র তিনটি বাতি জ্বলতে দেখা যায়। বাকিগুলো স্ট্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও একটি বাতিও জ্বলতে দেখা যায়নি। ফলে রাতের বেলা ফ্লাইওভারটি অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। এতে ওই ফ্লাইওভারটিতে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি গভীর রাতে ওই ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।
ফ্লাইওভারের নিচের মগবাজারের একটি অটোকার ওয়ার্কশপের শ্রমিক হাসেম উদ্দিন বলেন, বাতিগুলো চালু হওয়ার সপ্তাহ খানেক পর আস্তে আস্তে বন্ধ হতে শুরু করে। এগুলো মাদকসেবী কিছু চোরচক্রের সদস্য ভেঙে নিয়ে যায়। বিক্রি করে নেশাদ্রব্য কিনে রাতভর নেশা করে তারা।
এদিকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ইস্কাটন থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট পর্যন্ত অংশের লাইটপোস্টের বাতির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখা গেছে। এর ফলে রাতের বেলায় এ ফ্লাইওভার দিয়ে মগবাজার থেকে মহাখালীমুখী যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত কয়েক দিন ইস্কাটন থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট পর্যন্ত এক কিলোমিটারের খুলে দেয়া ফ্লাইইওভারের এক অংশে কোনো লাইটপোস্টের বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।
ল্যাম্পপোস্টে বাতি থাকলেও সেগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ দেখা যায়। এ সময় মগবাজার হয়ে মহাখালীর দিকে আসা গাড়িগুলো পাশের লেনের জ্বালিয়ে রাখা ল্যাম্পপোস্টের আলো দিয়ে ফ্লাইওভার পার হচ্ছেন। তবে ইস্কাটন থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ ও ওয়্যারলেস গেটে ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে বেশ অন্ধকার দেখা গেল। কারণ, এ স্থানগুলোতে আশপাশ থেকেও আলোর ছটা আসছে না।
ফলে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের ভরসা গাড়ির হেডলাইট। ফ্লাইওভারে লাইট বন্ধ থাকা নিয়ে সিএনজিচালক রুবেল হোসেন বলেন, রাতের বেলায় ফ্লাইওভারের ওপরের বাতি জ্বলবে- এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে এখানে লাইটগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়িত্ব কে নেবে। আমি শুরু থেকে একপাশে লাইট দেখছি অন্যপাশে কোনো লাইট দেখি না।
এর আগে কয়েক দফা নির্মাণব্যয় বাড়িয়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। দ্রুত বাস্তবায়নের নাম করে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়।
এরই মধ্যে তিনটি প্যাকেজের কাজ শেষে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন শুরু থেকেই ভালো মানের ফ্লাইওভার বানানোর বদলে অর্থ বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে বেশি। তাই মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করলেও মানসম্পন্ন ফ্লাইওভার হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি