নিউজ ডেস্ক: অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল সরদার। আওয়ামী লীগ বিটের সাংবাদিক মুহম্মদ আকবর মঙ্গলবার দুপুরে ফয়সালের সঙ্গে তোলা ছবি শেয়ার দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন- ‘৯ মার্চ পিকনিকে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ভাইকে বললাম, ভাই (ফয়সালকে) আসেন একটা সেলফি তুলি। ফয়সাল ভাই রসিকতা করে বললেন, তোলেন। মইরা-টইরা গেলে অন্তত একটা স্ট্যাটাস দিতে পারবেন।
এরপর বললেন, ভাই মোবাইলটা এভাবে ধরেন তাহলে ফ্রেমটা ভালো আসবে। তার কথামতো সেলফি উঠানো হল। এরপর লটারিতে প্রথম পুরস্কার (এলইডি টিভি) পাওয়ার পর সেকি উচ্ছ্বাস তার! থিয়েটার করে, নাটক নির্মাণ করে অতঃপর এসেছিলেন রিপোর্টিংয়ে।
শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম : শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় উত্তর বড় সিধলকুড়ায় নিহত ফয়সালের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। অফিস থেকে ৫ দিনের ছুটি নিয়ে সোমবার তিনি নেপালে যান।
যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি তার বড় বোন শিউলি বেগমকে বলে যান, ৫ দিনের জন্য ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। বাড়িতে তার মা সামসুন্নাহার, বাবা সামসুদ্দিন সরদার, ছোট ভাই রাকিব কাউকেই দেশের বাইরে যাওয়ার কথা জানাননি। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শুনে ফয়সালের মামা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী বিকালে ফয়সালের বাবার কাছে ফোন করে জানতে চান ফয়সাল কোথায়?
বাবা বড় মেয়ে শিউলির কাছে ঢাকায় খবর নিয়ে জানেন, ফয়সাল ৫ দিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে। জানতে পারেন নেপালের কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় অনেক লোক মারা গেছেন। ওই বিমানে ফয়সাল ছিলেন।
আমাদের শ্যাম মামা কই : হাসি-খুশি দুটি শিশু পরম নির্ভরতায় মিশে আছে প্রিয় মামার বুকে। এ রকম আরও শতাধিক ছবি আছে। এমন দৃশ্য ধারণের ক্ষণ আর কোনো দিন ফিরে আসবে না দুই শিশু নিফা (৩) ও শাহরিয়ারের (৭) জীবনে। তাদের জীবনে এ ছবি শুধুই কান্নার উপলক্ষ হয়ে থাকবে। প্রিয় এই দুই ভাগ্নে-ভাগ্নিকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ।
সোমবার নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় ফয়সালের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে হাজী আফসার উদ্দিন লেনে ফয়সালের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকাহত স্বজনদের আহাজারি।
প্রিয় ভাইকে হারিয়ে বারবার বিলাপ করছেন বোন শিউলি। তার এমন অবস্থা দেখে ছোট্ট দুই শিশুসন্তান নিফা ও শাহরিয়ার কাঁদছে। বাসার মধ্যে এদিক-ওদিক দৌড়াচ্ছে আর বলছে শ্যাম শ্যাম, আমাদের শ্যাম কোথায়? ফয়সালকে ওরা শ্যাম বলে ডাকত। মামাকে না পেয়ে ওরা শুধুই কাঁদছিল। মোবাইলে থাকা শ্যামের ছবি দেখিয়ে ওদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজনরা।
বোন শিউলীর সঙ্গেই থাকতেন ফয়সাল। তার জীবনজুড়ে ছিল বোনের দুই সন্তান নিফা ও শাহরিয়ার। মামার সঙ্গেই ঘুমাত তারা। শিউলি বলছিলেন, ‘তোমরা আমার ভাইকে এনে দাও, আমি ভাইয়ের কাছে যাব।’
ফয়সালের মামা মো. রাজিব জানান, তার বড় ভাই কায়কোবাদ মঙ্গলবার দুপুরে নেপালে গিয়েছেন। ভাই জানিয়েছেন, ফয়সাল নেই, ফয়সালের মৃত্যু হয়েছে। তারপর আর কথা বলতে পারছিলেন না রাজিব, শুধুই কাঁদছিলেন।
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্না করছিলেন ফয়সালের ছোটবেলার বন্ধু মো. রাসেল। রাসেল জানান, তারও ফয়সালের সঙ্গে নেপালে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তাকে ফেলেই ফয়সাল চলে যায়। যাওয়ার আগে প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। যাওয়ার সময় ফয়সাল বলে যায়, ‘বন্ধু তুই রাগ করিস না। পরে দুই বন্ধু মিলে নেপালে যাব।’
ফয়সালের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। তার বাবা-মা দুজনেই গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ছেলের মৃত্যুতে তারা পাগলপ্রায়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস