ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় রিমা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় পাষণ্ড স্বামী। এসময় মায়ের মরদেহের পাশেই ছিল দেড় বছরের শিশু নাহিদ। তিনদিন ধরে সেই মরদেহের সঙ্গেই ছিল নাহিদ।
এই সময়ে মায়ের আঙুল চুষে আর কেঁদে কেটেছে তার দিন। অবশেষে তার কান্নার শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার কোতালেরবাগ বউ বাজার এলাকা থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
প্রতিবেশী ও পুলিশ জানায়, ফতুল্লার কোতালেরবাগ বউ বাজার এলাকার আছির আলী সরদারের ছেলে আলামিন গত আড়াই বছর আগে পোশাক শ্রমিক রিমা আক্তারকে প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ে করে। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। বর্তমানে শিশুটির বয়স দেড় বছর।
আলামিন পোশাক কারখানার কর্মী হলেও এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত। আলামিন ঠিকভাবে কাজ না করায় এবং ঠিক গভীর রাতে বাসায় ফেরায় তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। আলামিন রিমাকে প্রায়ই মারধর করতো।
তারা আরও জানান, এই অশান্তির জেরেই সোমবার রাতের কোনো এক সময় আলামিন রিমাকে ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে শিশু নাহিদকে রিমার মরদেহের পাশে রেখেই ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
বুধবার সন্ধ্যায় শিশুর কান্না ও লাশের দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক ও প্রতিবেশী নাছিমা ঘরের তালা ভেঙে গৃহবধূর মরদেহ দেখে। পরে লাশের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, বিকেলে খবর পেয়ে আলামিনের ঘরের সামনে এসে দেখি শিশুর কান্না, লাশের দুর্গন্ধ। পরে ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি খাটের ওপর রিমার মরদেহ। মরদেহের পাশে দেড় বছরের শিশুটি মায়ের হাতের আঙুল চুষছে। তিনদিন তালাবদ্ধ থাকার পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির তিনদিন ধরে মৃত মায়ের আঙুল চুষে বেঁচে থাকার বিষয়টি আশ্চর্যজনক।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অটল দাস বলেন, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ফতুল্লা থানার ডিউটি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা গিয়ে দেখি শিশুটি মায়ের মরদেহের উপর বসে কাঁদছে। এখন শিশুটি আমাদের হেফাজতেই রয়েছে। অভিভাবকরা আসলে আমরা তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করব।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস