ঢাকা: শর্মিলা রহমান সিঁথি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী। হঠাৎ করেই লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। ফিরেই দেখা করেছেন কারাবন্দি শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে। বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে যাওয়ার পর তার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে বিএনপির গোপন সমঝোতার যে গুঞ্জন চলছে, এ অবস্থায় সিঁথির হুট করে দেশে ফেরা ও তার তৎপরতার বিষয়টি ‘টক অব দ্য বিএনপি’তে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বেশ তৎপর বিএনপি। যে কোনো মূল্যে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি চায় দলটি। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দলীয় উদ্যোগে সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তা এগোতে থাকে অত্যন্ত ঢিমেতালে। যার কারণে দলের নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না খালেদার পরিবার। সেই সূত্র ধরেই পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে হুট করেই দেশে ছুটে আসেন কোকোর স্ত্রী সিঁথি রহমান।
সিঁথি দেশে আসার পর খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়ায় যেমন গতি ফিরেছে, তাকে নিয়ে বিএনপিতে নানা আলোচনাও ডালপালা ছড়াচ্ছে। জানা গেছে, শুধু শাশুড়ির মুক্তিই নয়, তার ‘চিকিৎসার’ স্বার্থে দেশে ফেরার সময় লন্ডন থেকে সংগ্রহ করে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন রুটিন মাফিক করা খালেদা জিয়ার আগের চিকিৎসার সব কাগজপত্রও।
সিঁথি রহমান দেশে ফেরেন গত বৃহস্পতিবার রাতে। এসেই শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে। শাশুড়ির সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা একান্ত সময় কাটান তিনি। এ সময় খালেদা জিয়া তাকে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে সেই মোতাবেক কাজ করতে বলেন। সিঁথিও তাকে মুক্ত করে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে ফিরোজায় দুজন আইনজীবীর সঙ্গে পারমর্শ করেন সিঁথি। খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি।
জানা যায়, সিঁথির যোগাযোগ ও তৎপরতার কারণেই গত রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে টেলিফোনে আইজি প্রিজন ব্রি. জে. সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন আহমেদের কাছে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়া হয় এবং তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় হাজির হন কারা চিকিৎসক। এমনকি স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের একটি কপি কারাগার থেকে পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
আইনজীবীরা চলে যাওয়ার পর রাতে সিঁথির সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সূত্র জানায়, ওই দিন সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টেলিফোনে মির্জা ফখরুলকে বলেন, এখন থেকে দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে সিঁথির সঙ্গে আগে আলোচনা করতে হবে। এটা শোনার পরই টেলিফোন রেখে মির্জা ফখরুল দ্রুত ছুটে যান ফিরোজায়। এ সময় সিঁথির সঙ্গে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় কথা হয় মির্জা ফখরুলের। মির্জা ফখরুলকে তিনি বলেন, তিনি দল চালাতে নয়, মূলত খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতেই দেশে এসেছেন। তিনি বলেন, আপনাদের আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে ‘মায়ের’ মুক্তি কিছুতেই সম্ভব নয়, অন্যপথে এগোতে হবে। আপনি আমাদের সহায়তা করেন। মির্জা ফখরুলও তার কথায় সায় দেন। বৈঠক শেষে এখানে এসে যোগ দেন আরেক নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
শাশুড়ির মুক্তির তোড়জোড় হিসেবে দলের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে সবার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি। এর অংশ হিসেবেই গত রবিবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দলের ৩ জন সিনিয়র নেতার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন সিঁথি।
বৈঠক শুরুর আগে ওই ৩ নেতা গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু হুট করেই রাত পৌনে ৮টার দিকে এক সিনিয়র নেতার মোবাইলে ফোন বেজে ওঠে। এ সময় ৩ জন সিনিয়র নেতা একে অপরের সঙ্গে চোখের ইশারা বিনিময় করে তড়িঘড়ি করে যৌথসভা থেকে বেরিয়ে যান। পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিটি নির্বাচনে দলীয় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তটি সাংবাদিকদের জানিয়ে সভা মুলতবি ঘোষণা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিঁথি রহমানের সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান ও মির্জা আব্বাস। এ সময় এই ৩ নেতার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার বিষয়ে মূল আলোচনা করেন সিঁথি। আগামী ৮ এপ্রিল খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি থাকলেও এর আগে তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো প্রক্রিয়ায় আলোচনা এগোনো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়াও দলের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও ওই নেতাদের কাছে জানতে চান সিঁথি। তিনি ওই নেতাদের দলে আরো সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সব বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। এমনকি দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে মহাসচিব যেন একা সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন। এর আগে স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও ফিরোজায় সিঁথি রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে চান না বলে সিঁথি রহমান দারোয়ান দিয়ে খবর পাঠান গেটের বাইরে অপেক্ষাকৃত মওদুদ আহমদের কাছে।
তবে এ বৈঠকের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বিএনপির ওই ৩ সিনিয়র নেতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ বৈঠকের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, তাই উপস্থিত থাকার প্রশ্নই উঠে না। তবে মহাসচিব দুদিন আগে সিঁথি রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। অন্য দুজন নেতাও সিঁথি রহমানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। সূত্র : ভোরের কাগজ
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস