ঢাকা : গামছার নিচে তরমুজের দাম, কিন্তু কিভাবে? জানলে হাসবেন আপনিও। রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তের পাশের গোদারাঘাট। বুড়িগঙ্গায় ট্রলারে করে নিয়ে এসেছে মৌসুমী রসালো ফল তরমুজ। বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অপেক্ষায় কৃষক ও বেপারিরা।
এক আড়ৎদার ট্রলারে থাকা তরমুজ বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলেন কী ভাই কত? এমন সময় ক্রেতা-বিক্রেতার হাত ধরে মোসাফা করা শুরু করলেন। সঙ্গে সঙ্গে কাধে থাকা লাল রঙের গামছা দিয়ে হাত ঢেকে দিলেন ক্রেতা।
গামছার ভিতর দুজনের হাত নাড়াচারা করছেন আর বলছেন- ‘হবে?’ বিক্রেতা বলছেন- ‘না’। ক্রেতা আবার বললেন- ‘এটা হবে?’ বিক্রেতার উত্তর- ‘না’। ক্রেতা- ‘লও, দিয়া দাও’। বিক্রেতা- ‘না, না, হবে না। পোষায় না।’ শেষে বলছেন- ‘এটা লাগবে’।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাদামতলী, ওয়াইজঘাট এলাকায় প্রতিটি ট্রলারেই চলছে তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়ে এমন ঘটনা। গামছা দিয়ে হাত ঢেকে চলছে দর কষাকষি।
কৌতুহলের এ বিষয়টি জানতে চাইলে এক বেপারি আফজাল হোসেনের বলেন, এটি পুরনো রীতি। মুখে দর না বলে একজন আরেক জনের হাতের আঙুল ধরে দাম বলে।
কীভাবে বোঝা যাবে যে, কত টাকা দাম চেয়েছে বিষয়টি জানতে চাইলে আফজাল হোসেন বলেন, এখানে মূলত আঙুলের করের হিসাব টাকার অংক বলা হয়। একটি কর মানে এক হাজার টাকা। একটি আঙুলে চারটি কর থাকে। কেউ যদি একটি আঙুল মোঠ করে ধরে তাহলে বুঝতে হবে চার হাজার টাকা বলেছে। পাচঁটি আঙুল মোঠ করে ধরলে বুঝতে হবে ২০ হাজার টাকা বলেছে। ১০ হাজাজার টাকার ক্ষেত্রে দুটি আঙুল ও দুটি কর ধরতে হবে।
বিষয়টি আরও পরিস্কার করে আরেক পাইকার মন্টু মিয়া বলেন, ধরেন আমি ১০০ তরমুজ বিক্রি করবো। ১৫০ টাকা করে একশ তরমুজের দাম চেয়েছি ১৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে তিন আঙুল মোঠ করে ধরে চতুর্থ আঙুলের তিনটি কর ধরবো।
এভাবে আড়াল করে দাম বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবে দাম বললে ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়া অন্যরা দাম সম্পর্কে জানতে পারে না। এতে করে কেউ দাম বেশি বা কমের বিষয়ে মন খারাপ করে না। এছাড়াও একজন ক্রেতার সঙ্গে দরদাম বলে আমার ভালো লেগেছে। তাকে আমি কমবেশি দামে পণ্য দিয়ে দেবো। এতে অন্য কেউ আপত্তি করতে পারে না।
তবে গামছার নিচে দরদামের বিষয়টি পছন্দ করেন না অনেক কৃষক। তরমুজ নিয়ে আসা জাফর আকন নামের এক কৃষক বলেন, আমি খোলামেলা দরদাম বেশি পছন্দ করি। কত টাকা দামে কিনবে সরাসরি বলবে এটাই ভালো। গামছার আড়ালে দর কষাকষিকে কেউ পছন্দ করুক আর নাই করুক বেশিরভাগ তরমুজের কেনাবেচা হচ্ছে এ নিয়মেই।
এদিকে তরমুজের দরদামের জন্য অনেকেই কিনছে নতুন গামছা। ফলে বিক্রি বেড়েছে গামছার। বাদামতলী এলাকার গমলা বিক্রেতা দেওয়ান হোসেন বলেন, প্রায় দেড় দুই মাস অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে তরমুজের মৌসুম। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য তরমুজ নিয়ে আছে কৃষক ও বেপারিরা। যেহেতু দরদামের জন্য গামছা লাগে। তাই সবাই নতুন গামছা কেনে। এই মৌসুমে তরমুজের সঙ্গে আমাদের গামছার বিক্রিও ভালো হয়।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস