বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০১:২৪:৪৩

লঞ্চের কেবিনে বন্ধুকে হত্যা, এরপর বস্তায় ভরে লাশ নদীতে

লঞ্চের কেবিনে বন্ধুকে হত্যা, এরপর বস্তায় ভরে লাশ নদীতে

ঢাকা : বেড়ানোর কথা বলে লঞ্চের কেবিনে নিয়ে বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। হত্যার পর আবার বন্ধুর মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছে। এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে খুনি তাওহিদুল ইসলাম তামিম।

১৯ এপ্রিল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তামিম জানায়, ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর শ্বাসরোধ করে সে বন্ধু হাবিবুর রহমান সিফাতকে (১৭) হত্যা করে। এরপর তার পেট ফেরে লাশ বস্তা ভরে চাঁদপুর নদীতে ফেলে দেয়।

এ হত্যাকাণ্ডে মেহেদী হাসান নেহাল নামে তার বন্ধু তাকে সহায়তা করেছে। নেহালকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মামলায় তামিম ও নেহালকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তামিম জানায়, ৪ এপ্রিল সদরঘাট থেকে একটি লঞ্চের কেবিনের ওঠে সিফাতকে হত্যা করা হয়। এরপর তার পেট কেটে বস্তায় পরে চাঁদপুর নদীর মোহনায় ফেলে দেয়া হয়। পরদিন সেখান থেকে লঞ্চে করে ঝালকাঠি চলে যায় নেহাল। এরপর ওইদিন সে সেখানে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। অপরদিকে মাওয়া হয়ে তামিম ঢাকাতে চলে আসে।

এরপর সিফাতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার মাকে ফোন করে সে দুই দফায় ২২ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। এদিকে ছেলেকে না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ করেন সিফাতের বাবা হারুন অর রশীদ। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। এরপর একে একে দুই খুনিকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের এসআই জহিরুল ইসলাম বলেন, খুনের মূল পরিকল্পনাকারী মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র তামিমের সঙ্গে সিফাতের বন্ধুত্ব ছিল। এ বছর সিফাত প্রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তারা সিনিয়র ও জুনিয়র হলেও একসঙ্গে চলাফেরা করত, মাঝে-মধ্যে আড্ডা দিত।

তারা ক্রিকেট খেলত। সিফাত থাকত নানা বাড়ি কেরানীগঞ্জের ওয়াশপুরে। একই এলাকায় ভাড়া থাকত তামিম। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিফাতকে সদরঘাট এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যায় তামিম। পরিকল্পনা অনুযায়ী তামিম পানির বোতলে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে নেয়।

এছাড়া বস্তা, ছোরা ও গামছা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। আগে থেকে লঞ্চঘাটে অবস্থান করা নেহাল পারাবত-৯ লঞ্চের তিনতলার একটি কেবিন বুকিং করে। লঞ্চে উঠে তারা সরাসরি সিফাতকে কেবিনে নিয়ে যায়। সেখানে কৌশলে সিফাতকে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি খেতে দেয়া হয়। এরপর তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তামিম ও নেহাল।

সিফাতের পেট কেটে বস্তায় পুরে চাঁদপুর নদীর মোহনায় ফেলে দেয় তারা। হত্যার পর নেহাল গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলসিটিতে চলে যায়। সেখানে সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর সেখান থেকে তামিম মাওয়া হয়ে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় এসে সিফাতের মোবাইল ফোন থেকে তামিম তার মাকে (সিফাত) ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

সিফাতের মা দুই দফায় তাকে ২২ হাজার টাকা দেয়। এসআই জহিরুল জানান, প্রথমে প্রযুক্তির সহায়তায় তামিমকে রাজধানীর কাটাসুরা এলাকা থেকে আটক করা হয়। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নেহালকে নলসিটি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তামিম জানায়, মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু নেহাল আদালতে জানায়, তামিমের সঙ্গে সিফাতের এক বান্ধবীর দৈহিক সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের কিছু ছবি সিফাতের কাছে ছিল। সিফাত তা প্রকাশ করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তামিম।

রিফাত নিখোঁজের ঘটনায় বাবা হারুন অর রশীদ মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, ‘৬ এপ্রিল আমার ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা আমার স্ত্রীর মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে ছেলেকে আটক রেখেছে জানায়।

ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে তারা ৩০ হাজার টাকা দাবি করে হুমকি দিতে থাকে। তাদের দাবি করা টাকা না দিলে ছেলের মৃতদেহ পাবি বলেও হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা দুটি বিকাশ নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয়।’ -যুগান্তর

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে