ঢাকা : রাজধানীর মিরপুরের একটি বাসা থেকে দুই মেয়েসহ মায়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবার জানিয়েছে চাকরি ও সংসার নিয়ে অবসাদগ্রস্ত ছিলেন জেসমিন আক্তার।
পুলিশ বলছে, বাসার একটি দরজা বন্ধ কক্ষের মেঝেতে মা জেসমিনের ও খাটে দুই সন্তানের লাশ পড়া ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অবসাদগ্রস্ত হয়ে দুই মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন মা।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দারুস সালাম থানা এলাকার পাইকপাড়া সি টাইপ সরকারি কোয়ার্টারের একটি ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- জেসমিন আক্তার (৩৫), তার মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি (৯) এবং আদিলা তাহসিন হানি (৫)।
নিহত নারী জেসমিন আক্তার ও তার স্বামী হাসিবুল ইসলাম সরকারি কর্মকর্তা। হাসিবুলের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে ও জেসমিনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। ২০০৮ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বড় মেয়ে হিমি বাসার কাছেই মডেল একাডেমির ২য় শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো।
ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রী দুই সন্তানসহ হাসিবুলের ভাগিনা রওশন জামিল, তার স্ত্রী রুমানা বেগম দেড় বছর ধরে বসবাস করতেন। এছাড়া, জেসমিনের ভাই শাহীনুর এবং খালাতো বোন রেহেনা পারভীন দীর্ঘদিন ধরে ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
নিহত জেসমিনের ভাই শাহীনুর ইসলাম জানায়, সোমবার সকালে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই, দুপুরে একবার আসলেও আবার বের হয়ে যাই। আপা স্বাভাবিকভাবে চারটার দিকে অফিস থেকে আসতেন। আজ আড়াইটার দিকেই বাসায় চলে আসেন।
দুলাভাই ৫টার দিকে বাসায় এসে দেখেন আপার রুমের দরজা বন্ধ এবং ভেতরে টিভির শব্দ। দুলাভাই ভেবেছেন তারা টিভি ছেড়ে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই তিনি কাউকে না ডেকেই নামাজ পড়তে মসজিদে যান। মাগরিবের নামাজ শেষে দুলাভাই এসে আপাকে ডাকাডাকি করলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
তারপর দরজা ধাক্কা দিয়ে একটু ফাঁক করে দেখেন ভেতরে রক্ত। তখন দুলাভাই আমাকে ফোন করে বলেন দরজা ভাঙতে হবে। কিছুক্ষণ পর আমি বাসায় ফিরি এবং দরজা ভেঙ্গে দেখি ভেতরে তিনজনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে।
শাহীনুর বলেন, আপা তার চাকরি ও সংসার নিয়ে খুব ডিপ্রেশনে ছিলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, চাকরি করলে বাচ্চাদের দেখবে কে, আর বাচ্চাদের দেখতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে। এছাড়া, তার প্রচণ্ড মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। গত মাসে আপা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
জেসমিনের খালাতো বোন রেহানা পারভীন জানান, তার আপা ভারতসহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করাতেন। মানসিক রোগী ছিল না। তবে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিল। সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তা করতো।
বাসার পাশের মুদি দোকানি আব্দুল আহাদ বলেন, বাচ্চা দুইটা প্রায়ই আমার দোকানে আসতো। সোমবার দুপুর সোয়া একটার দিকে এসেছিল। বড় মেয়েটা আমার মেয়ের সঙ্গে দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পাশের মসজিদে আরবি পড়তো। আজও সে মসজিদে আরবি পড়তে গিয়েছিল।
জেসমিনকে দেখে কখনো অস্বাভাবিক মনে হয়নি জানিয়ে মুদি দোকানী আহাদ বলেন: আমার কাছ থেকে হাসিবুল ও জেসমিন ছোটখাট বাজার করত। তারা নিজেদের মতো সারা মাস বাজার বাকিতে নিত এবং মাস শেষে পরিশোধ করে দিত।
পুলিশ জানায়, বাসার একটি দরজাবন্ধ কক্ষের মেঝেতে মা জেসমিনের ও খাটে দুই সন্তানের লাশ পড়া ছিল। জেসমিনের গলা, দুই হাতের কব্জি ও পেটে ৮-১০টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বড় মেয়ে হিমির বুকে তিনটি, দুই হাত ও গলায় ছুরিকাঘাত এবং ছোট মেয়ে হানির পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, দুই সন্তানকে হত্যা করে মা আত্মহত্যা করেছেন। তবে এর সঙ্গে অন্য কোন যোগসূত্র আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিহত তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। --চ্যানেল আই
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস