বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮, ১১:৪৬:০১

খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে রায় ১৫ মে

খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে রায় ১৫ মে

নিউজ ডেস্ক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল চেয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষ হয়েছে।

আদালত আগামী ১৫ মে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গতকাল শুনানির শেষ দিনে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা মূল আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানির আবেদন জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, দুদকের কোনো মামলায় সাজা হওয়ার পর হাইকোর্ট জামিন দিলে তা আপিল বিভাগে বাতিল করার একটিও নজির নেই। তাই খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে আদালতের ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণ সৃষ্টি করা ন্যায়বিচার পরিপন্থী হবে।

গতকাল দ্বিতীয় দিনে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শুনানি হলেও শেষ সময়ে প্রচণ্ড হৈচৈ, হট্টগোল হয়েছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও সরকারি আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি এজলাস থেকে নেমে যেতে উদ্ধত হন। তবে উভয় পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

গতকাল সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন শুনানি করেন। এরপর দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। এ সময় আদালতকক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. আব্দুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচারব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেননি।

এ বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা সত্য নয়। এ সময় পেছন থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হৈচৈ করে ওঠেন।

জামিন বাতিলের একটা নজির দেখান—খন্দকার মাহবুব ।ভারতীয় সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী জয় ললিতা ও লালু প্রসাদ যাদবের জামিনের ক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেলের দেওয়া উদাহরণ টেনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় জয় ললিতার চার বছর ও লালু প্রসাদ যাদবের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জয় ললিতাকে সাত দিনের মাথায় এবং লালু প্রসাদ যাদবকে দুই মাসের মাথায় জামিন দিয়েছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আমাদের দেশে একটি মামলাও দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারবে না যে হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখাই ন্যায়সংগত হবে।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে জয়নুল আবেদীন বলেন, তাঁকে জামিন দেওয়া হলে তাঁর শারীরিক অবস্থার এত অবনতি হতো না। সরকার নিজেই স্বীকার করেছে খালেদা জিয়া অসুস্থ।

এ কারণে তাঁকে পাঁচবার নিম্ন আদালতে হাজির করেনি। জামিন আটকে রেখে এভাবে ভোগান্তি করা ঠিক নয়। আমাদের দেশে আমরা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক—মওদুদ

মওদুদ আহমদ বলেন, নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ে কে মূল অভিযুক্ত, কে সহযোগী অপরাধী, তা উল্লেখ করা হয়নি। খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন না হলে মামলাটা এ পর্যায়ে আসত না। রায়েও বলা হয়নি, কে মূল আসামি আর কে সহযোগী।

সাজা দিতে হবে, সে জন্যই সাজা দিয়েছে। দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা ভিকটিম। আমাদের দেশে আমরা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক। আজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, ওনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। আদালতের প্রশ্নে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি দুদক আইনজীবী

গতকাল শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমানের জামিনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই দুদকের মামলায় সাত বছর থেকে ১০ বছর সাজা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককেই হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন; কিন্তু আপিল বিভাগ তাঁদের জামিন বাতিল করেননি।

এ বিষয়ে আদালত দুদকের আইনজীবীকে বলেন, তাঁরা তো (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে দুদকের মামলায় সাজা হওয়ার পর হাইকোর্টের জামিন আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন, এমন একটি মামলার উদাহরণ দেখান। কিন্তু দুদকের আইনজীবী একটি মামলাও দেখাতে পারেননি।

এতিমের টাকা চুরির কথা বললে তাদের গা জ্বালা করে—অ্যাটর্নি জেনারেল। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তো প্রশ্ন তুলিনি। এর জবাব দেওয়ার দরকার নেই। আপনি যুক্তি খণ্ডন করেন।’

এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মশিউর রহমানের মামলা এবং খালেদার মামলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রের টাকা চুরি করা হয়েছে।’ তখন সমস্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গিয়েছে—এটা বলতে পারব না। তাদের গা জ্বালা করে কেন? এটা আমাকে বলতে হবে।’ এ সময় আরো তীব্র চেঁচামেচি শুরু হয়।

খালেদার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ : কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। গতকাল বুধবার এ কর্মসূচি পালিত হয়।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে