ঢাকা: এই ঢাকা শহরে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে, দেখার কেউ নেই! রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বনানী কাকলী মোড় পার হয়ে কিছুটা দূরে ওভারপাসের কাছে বাঁ দিকের ফুটপাতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করছিলেন এক যুবক। তাঁর বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, পরনে জিন্স প্যান্টস আর টি-শার্ট।
তাঁর হাহাকারভরা কান্না শুনে মোটরবাইক আরোহীরা একটু থেমে ঘটনা জেনেই চলে যাচ্ছিলেন। যেন কিছুই হয়নি— এমনভাবেই একজন মন্তব্য করলেন, ‘ওহ্, ছিনতাই!’ একজন বললেন, থানায় যান। পুলিশকে জানান। আরেকজন বললেন, ‘কী হবে মামলা করে? এতে নতুন করে ঝামেলায় পড়তে হবে। যা গেছে তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ’ কিছুটা দূরে ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। এদিকে তাঁদের নজরই ছিল না। পাশেই নতুন রাস্তা ও ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলছে। সেখান থেকে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক পানি নিয়ে এসে ওই যুবকের মাথায়, মুখে ঢেলে দিয়ে ফিরে গেলেন।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে এমন দৃশ্য দেখে এই প্রতিবেদক সেখানে থামেন। কী নাম আপনার? এ প্রশ্নে যুবকটি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘আনোয়ার হোসেন হৃদয়। ’ জানালেন, তাঁর বাসা ঢাকার তুরাগ থানা এলাকার কামারপাড়ায়। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা রয়েছে তাঁর। কারওয়ান বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছিলেন। যাচ্ছিলেন বিমানবন্দরে।
মহাখালী পার হয়ে এসে কাকলিতে পৌঁছলে অটোরিকশাচালক রাস্তার পাশে থেমে তাঁকে দরজা খুলে দিতে বলেন। গাড়ির কোনো সমস্যা হয়েছে ভেবে তিনি দরজা খুলে দেওয়া মাত্র তিন-চারজন লোক জোর করে অটোরিকশায় উঠে পড়ে। ওরা উঠেই মারতে শুরু করে তাঁকে।
হৃদয় বলেন, ‘আমার কাছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০০ টাকা ছিল। ওরা সেই টাকা ও একটি মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নিয়ে এখানে আমাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে। ’
যুবকটি জানালেন, তাঁর স্থায়ী ঠিকানা ঢাকার ধামরাইয়ের আউটপাড়ায়। বাবার নাম আব্দুল মাজেদ। তিনি বিবাহিত এবং তাঁদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
হৃদয়ের কাছ থেকে নম্বর জেনে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি জানানো হলে তাঁর স্ত্রী কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। পরে বললেন, ‘আমি যাচ্ছি। ’ গতকাল সন্ধ্যায় ওই মোবাইল ফোন নম্বরে আরো কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সন্ধ্যায় একটি দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনেছি, কিন্তু এখনো কেউ থানায় মামলা করতে আসেননি।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস