মাহাবুর আলম সোহাগ: বড় ভাই সাকিব আল হাসানের চেয়ে ছোট ভাই তামিম ইকবাল একটু বেশিই মেধাবী। পড়ালেখাসহ সব বিষয়ে এগিয়ে সে। খুব সহজেই যে কোনো বিষয় মনে রাখতে পারে তামিম। আর সাকিব একটু সহজ-সরল। লাজুক প্রকৃতির। মনভোলা। তবে তারও আগ্রহ ভালো। কিন্তু সহজে কোনো কিছু মনে করতে পারে না সে। এক্ষেত্রে তামিম যেমন দুষ্টু তেমনি মেধাবীও। আর সাকিব নিরিবিলি থাকতে বেশি পছন্দ করে। বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকে সে।
দু’জনেই রাজধানীর কল্যাণপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ৬ বছর বয়সী তামিমের ভর্তির রোল ৫১ আর ৭ বছর বয়সী বড় ভাই সাকিবের রোল নম্বর ৫২। এক্ষেত্রেও ছোট ভাইয়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বড় ভাই সাকিব। তবে তাদের সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবার এবং ভালো পরিবেশে রাখলে দুজনেই অনেক ভালো করবে বলে জানালেন তাদের গৃহশিক্ষিকা মিতু আক্তার।
তিনি বলেন, প্রায় ১৩ মাস ধরে তাদের দুই ভাইকে পড়াচ্ছি। তাদের পারিবারিক অবস্থার ব্যাপারে অনেক আগে থেকে জানি। তবে গত এক মাসে তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখছি। নিশ্চয়তার পরিবর্তন। অথচ কিছুদিন আগেও পরিবারের সবাই অনেক হতাশ ছিল। থাকারই কথা। কোনো আয় রোজগার ছিল না তাদের।
ভিক্ষা করে তাদের মা লেখাপড়া করাতো। আমার বেতন তিনি দিতেন ভিক্ষার টাকায়। তখন অনেকটা জোর করে পড়ার টেবিলে ধরে রাখতে হতো তাদের। এখন আর রাখতে হয়। কেমন যেন বদলে গেছে ওরা। এখন পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ওরা। হতাশা কেটে গেছে তাদের। লক্ষ্যও পরিবর্তন হয়েছে। এটা ধরে রাখলে শিক্ষক হিসেবে আমি বলতে পারি একদিন দুই ভাই অনেক বড় হবে।
সাকিব ও তামিমের গৃহশিক্ষক মিতু আক্তার রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাদের দুই ভাইকে বাসায় গিয়ে পড়ান তিনি। সাকিব ও তামিমকে নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে কথা হয় মিতু আক্তারের।
এক মাস ৫ দিন পর এদিন সাকিব ও তামিমের খোঁজ নেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় তাদের মা সাথী আক্তারের সঙ্গে। এ সময় তিনি দুই ছেলের শিক্ষিকা মিতু আক্তারের কাছে তাদের খোঁজ নেয়ার জন্য কথা বলার অনুরোধ করেন। তার সঙ্গে কথা শেষে পুনরায় কথা হয় সাথী আক্তারের সঙ্গে।
এ সময় তিনি বলেন, ইউএস-বাংলা গ্রুপ দায়িত্ব নেয়ার পর আমি ও আমার সন্তানদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বদলে গেছে। আমি চাই ইউএস-বাংলার টাকায় আমার দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে।
সাথী আক্তার বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত এক মাস আগে ১০ হাজার এবং এ মাসের ১২ তারিখে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন পরিচালক মাহবুব স্যার। এর মধ্যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে উনার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাও দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে সাকিব ও তামিমের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন। দুই ভাইয়ের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা এবং উনার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। আমি যেমন সাকিব-তামিমের মায়ের দায়িত্ব পালন করছি তেমনি উনি আমার বাবার দায়িত্ব পালন করছেন। আজকাল নিজের মানুষও এতটা করেন না যতটা উনি করছেন। উনার সঙ্গে কথা বললেই মনটা ঠান্ডা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আগে টিনের ঘরে থাকতাম। মাঝে মধ্যেই পোকামাকড় ও ইঁদুর ঘরের জিনিস নষ্ট করতো। কিছুদিন আগেও রাতে তামিমের পায়ে ইঁদুর কামড় দিয়েছিল। সেই এক বিশাল ঘটনা। সেখানেও মাহবুব স্যার সেই রাতের বেলায় তামিমকে হাসপাতালে ভর্তিসহ অনেক কিছু করেছেন।
সেই টিনের ঘর এই মাসে ছেড়ে দিয়ে একরুমের একটি বিল্ডিংয়ে উঠেছি। মাসে ৪ হাজার টাকা ভাড়া। প্রাইভেটের বেতন দিতে হয় ২ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে কোনো মতে হয়ে যাবে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই মাহবুব স্যারের টাকায় আমার দুই ছেলে মানুষ হোক। তারা মানুষ না হলে স্যার খুব কষ্ট পাবেন। স্যারকে এই কষ্ট আমি দিতে চাই না। তাই সাকিব-তামিমকে সব সময় বলি স্যারের সম্মান রাখতে হবে তোমাদের।
কথা বলার শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, আমরা এখন অনেক ভালো আছি। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। স্যারের জন্য অনেক দোয়া রইলো।
প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল ‘কোনো সাকিব-তামিম মাঠ কাঁপায়, কোনো সাকিব-তামিম ভিক্ষা করে’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর তাদের লেখাপড়াসহ সার্বিক দায়িত্ব নেয় দেশের স্বনামধন্য কোম্পানি ইউএস-বাংলা গ্রুপের ডিরেক্টর মাহবুব ঢালি। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত পরিবারটির খোঁজ-খবর এবং সঠিক সময়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি মাসে সহযোগিতা প্রদান করছেন।জাগো নিউজ
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস