ঢাকা: স্বামী মাদকাসক্ত। মাদক সেবনের টাকার জন্য স্ত্রীকে সব সময় মারধর করতেন। স্ত্রী বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে মাদক সেবনের এই টাকা দেন। একপর্যায়ে মাদক সেবনের টাকার জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। পরে স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন স্বামীকে হত্যা করে এই নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করবেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে ঘুমন্ত স্বামীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী। লাশের পাশেই স্ত্রী ওই রাত ঘুমিয়ে থাকেন। পরের দিন লাশ বস্তায় ভরে খাটের নিচে রাখেন। সে রাতেও তিনি ওই ঘরে ঘুমান। পরদিন সকালে লাশ ভর্তি চটের বস্তা একটি রিকশা ভ্যানে করে দূরে সড়কের ঢালে ফেলে দেন। ওই দিনই পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়ে দেয়। পরে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে।
এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের ভেড়িবাঁধ এলাকায়। গত ১৬ মে পুলিশ বাঁধের সড়কের ঢাল থেকে বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করে। লাশের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে পরিচয় শনাক্ত করে। তার নাম মো. ইব্রাহিম। বয়স ৪৫ বছর।
পেশায় একজন রিকশাচালক। থাকতেন রায়েরবাজারের রতনের বস্তিতে। পুলিশ পরে রতনের বস্তি থেকে ইব্রাহিমের স্ত্রী রওশন আরা বেগমকে আটক করে। আটকের পর রওশন পুলিশের কাছে তার মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন। পরে বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে রওশন আরা হত্যা সংক্রান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কামরাঙ্গীর চর থানার ওসি শাহীন ফকির বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। ঘাতক স্ত্রী তার স্বামীকে মাদকের রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনতে অন্তত ১৫ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছেন। ১২-১৩ বছর আগে রওশন আরা তার স্বামীকে বস্তির ভাড়া করা ঘর থেকে বের করে দেন। পরে ইব্রাহিম চট্টগ্রামে গিয়ে রিকশা চালান।
অন্যের বাসায় কাজ করে রওশন তার ৩ বছর বয়সের সন্তান রবিনকে মানুষ করতে থাকেন। বস্তির সবাই জানত ইব্রাহিম নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এক বছর আগে বস্তিতে হঠাত্ করে ইব্রাহিম ফিরে আসেন। স্ত্রী রওশনকে জানান যে, তিনি চট্টগ্রামে একটি মাজারে থাকতেন আর রিকশা চালাতেন।
দীর্ঘদিন পর স্বামী ফিরে আসায় রওশন তাকে ঘরে থাকতে দেন। মাদকের রাস্তা থেকে সরে এসেছে ভেবে রওশন তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরাতন রিকশা কিনে দেন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিদিন ইব্রাহিম ঘরে মাদক সেবন করেন।
এর প্রতিবাদ করলে রওশনের ওপর আগের মতো নির্যাতন চলত। ইতোমধ্যে রওশনের এক মাত্র সন্তান বড় হয়ে ধানমন্ডির স্টার কাবাবে কর্মচারী হিসেবে চাকরি পেয়েছে। মা-ছেলের সুখের সংসারে স্বামী বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে রওশন জানতে পারেন যে চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় তার স্বামী নাসিমা নামে একজনকে বিয়ে করেছেন।
প্রতিদিন ইব্রাহিম তার প্রথম স্ত্রীর সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এতে নাসিমা আরো ক্ষিপ্ত হন। এর মধ্যে রওশনের দেওয়া রিকশাটিও ইব্রাহিম বিক্রি করে দিয়ে মাদক সেবন শুরু করেন। এতে রওশন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস