ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এক তরুণীকে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল মাহমুদুল হক রনি নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। যদিও পরবর্তীতে পুলিশ বলেছে, মেয়েটা দেহকর্মী। রনিকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বাজে কমেন্টসও করেছেন।
এ নিয়ে লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন- রনি আর তার ড্রাইভাররে রাস্তায় উলঙ্গ কইরা পিটাইছেন। বহুত বীরের কাম করছেন। কিন্তু রনির স্ত্রী আর সন্তানেরা কী অপরাধ করছে? তাদের গালাইতেছেন কেন ভাইজান? তার স্ত্রীরে ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করতেছেন কেন?
আর যখন কেউ এমন কথা বলে তারে আপনারা ধরেন না কেন? ট্রাইবাল সমাজেও তো এত পুওর মূল্যবোধ থাকে না। কী শিক্ষা পাইতেছে এই জাতি। এই জাতিরে মানুষ করবে কে?
এরা লড়বে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে? সে তো নিজেই একটা নিম্নশ্রেণির ফ্যাসিস্ট। নিজের মাপেই একটা শাসক পাইছে এই জাতি। এখন এরা তাদের ফ্যাসিস্টপনা উদযাপন করুক।
ফেসবুকে আশরাফ শাফী নামে আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন- রনি হক বাজে ছেলে। কোন সন্দেহ নাই। সকাল থেকে তার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়ে বেড়াচ্ছে। রাফি (প্রকৃত ভিডিওকারী) তার পোষ্টে দুটি ভিডিও আপলোড করেন। একটি ভিডিওতে মেয়ে দুটিকে দেখা যাচ্ছে। জনগণ একদিকে ইচ্ছামতন রনিকে পেটাচ্ছে আর পাশেই দাঁড়িয়ে মেয়ে দুটি ঘটনার বিবরন শুনাচ্ছে। ঘটনার বিবরনে কোথাও জোড় করার কথা উল্লেখ নাই এবং মেয়ে দুটি এতকিছুর পরেও তখন সেখানে! অথচ জাতির মনে কোন প্রশ্ন জাগে নাই!
একটু আগে নিউজ ফিডে পেলাম, থানা থেকে বলেছে মেয়েটা দেহকর্মী। একটা দেহকর্মীর সঙ্গ অবশ্যই নেক্কারজনক কিন্তু সেটা ধর্ষন নয়। ছেলেটার চরিত্র খারাপ কিন্তু ক্রিমিনাল হিসেবে তাকে কতটুকু ট্রিট করা যায়! এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে মনে!
এই ছেলের তো লজ্জা নেই, সে পেট ভাসায়ে আবার রাস্তায় নেমে যাবে মুখ দেখাতে। কিন্তু তার সন্তানদের স্কুলিং এর কি হবে? তার স্ত্রীর কি হবে? দুই সন্তান রেখে তার স্ত্রী কোথায় যাবে? তার মা? তার বাবা?
এক অতি উতসাহী মনে করলেন তার দুই সন্তানের একটা বোধ হয় মেয়ে। তিনি রনির টাইমলাইনে মন্তব্য করে এলেন, তোর মেয়েটা বড় হলে আমাদের কাছে দিস! আরেকজন তার মায়ের সাথের ছবিতে লিখেছে, তোর মা এর সাথে গেলি না কেন ধর্ষণ করার আগে! স্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্যের কথা আর নাই বা লিখলাম!
আমার কিন্তু রনির পরিবারের জন্যই শুধু কষ্ট হচ্ছে তা নয়। আমার নিজেদের দিকে তাকিয়েও কষ্ট হচ্ছে! আমরা সুশীলতায় এক্সট্রিমিষ্ট, নাস্তিকতায় এক্সট্রিমিষ্ট, ধর্মে এক্সট্রিমিষ্ট, মাদক অভিযানে এক্সট্রিমিষ্ট, অবরোধে এক্সট্রিমিষ্ট, অনলাইনে এক্সট্রিমিষ্ট এবার অফলাইনেও এক্সট্রিমিষ্ট হয়ে পরেছি একে একে!
আমার শেষ একটা প্রশ্ন- কমপক্ষে দশ লাখ পুরুষের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে দেশের প্রায় লাখ দশেক দেহকর্মী কি করে খায়? পারবেন কাল সকালে ঐ দশ লাখ পুরুষকেও একই পরিনতি উপহার দিতে? যদি না পারেন তাহলে স্পেশালি তার জীবনটাকে সপরিবারে নরকে ঢেলে দেয়ার অধিকার আপনি কোথায় পেলেন? মিউচুয়াল মিসটেক এই সমাজে কয়জনের নেই? রনির অপরাধের ধরনটা মিউচুয়াল মিসটেক এর বাহিরে কি ছিল?? এনি এন্সার?