শুক্রবার, ১৫ জুন, ২০১৮, ০৫:৩৭:৪১

সোনালী ব্যাংকের ভল্টের সাত বস্তা টাকা পাচারের চেষ্টা

সোনালী ব্যাংকের ভল্টের সাত বস্তা টাকা পাচারের চেষ্টা

নিউজ ডেস্ক: সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় অবস্থিত স্থানীয় কার্যালয়ের সুরক্ষিত ভল্ট থেকে ৭ বস্তা নতুন টাকা অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে পাচারের চেষ্টা করা হয়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের বাধায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ব্যাংকের দুই কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় আরও কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে ব্যাংকে এই ঘটনা ঘটে।

সূত্র জানায়, গত বুধবার ছিল শবেকদরের ছুটি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় যথারীতি বন্ধ ছিল। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থায় স্থানীয় কার্যালয় বা লোকাল অফিস খোলা ছিল। ব্যাংকের লেনদেন সম্পন্ন করে কর্মকর্তা-কর্মাচারীরা ইফতারের পর পরই চলে যান। এই সময়ে ঘটে অভিনব জালিয়াতির ঘটনা। ব্যাংকের সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন আনসার সদস্য। হঠাৎ তারা দেখতে পান ৭ বস্তা নতুন টাকাসহ একটি পিকঅ্যাপ ভ্যান ব্যাংকের ভেতর থেকে বের হচ্ছে। আনসারের নিরাপত্তা প্রহরীরা পিকঅ্যাপ ভ্যান আটক করেন। 

পিকঅ্যাপ ভ্যানে থাকা দুজনের কাছে নতুন টাকা বের করে নেওয়ার বৈধ ছাড়পত্র দেখতে চান। তারা প্রথমে বলেন, এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকে যাচ্ছে। জেরার মুখে আবার বলেন, ভল্টে সমপরিমাণ পুরনো নোট রেখে নতুন টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনোকিছুতেই আনসারের নিরাপত্তা প্রহরীদের ম্যানেজ করতে পারেননি সঙ্গে থাকা লোকজন। পরে ঘটনাটি উপরের কর্মকর্তাদের জানানো হয়। এর পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে নতুন টাকার বস্তাগুলো আবার ভল্টে ফেরত পাঠানো হয়।

সোনালী ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নতুন টাকার কালোবাজারিদের যোগসাজশে এসব অর্থ পাচার করছিল। নিরাপত্তা প্রহরীদের তৎপরতায় হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এ ঘটনা গতকাল ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে ব্যাংকপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনার তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগে রক্ষিত টাকা ও ভল্টে রক্ষিত টাকা গুনে দেখছেন। স্থানীয় কার্যালয়ের ৬ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া প্রধান কার্যালয়ের ৪ সদেস্যের অপর একটি কমিটি কাজ করছে। এর বাইরে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংকের এমডি স্কোয়াডও এ ঘটনার তদন্ত করতে গতকাল কাজ শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের ভল্টের চাবি ছিল ব্যাংকের ক্যাশের যুগ্ম জিম্মাদার গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ শাখার যুগ্ম জিম্মাদার বাবুল সিদ্দিকীর কাছে। এই দুজনকে গতকাল বিকালে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এর মধ্যে বাবুল সিদ্দিকী কিছু দিন আগে এ শাখায় যোগ দিয়েছেন। গোলাম মোস্তফা আগে থেকেই এ শাখায় ছিলেন।

ব্যাংকের সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে ব্যাংক থেকে নতুন নোট দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত নতুন নোট দেওয়া হয়েছিল। এগুলো ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেওয়ার কথা। ৩-৪ দিন ধরে ব্যাংক থেকে কোনো নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছিল না। ব্যাংকের কর্মীরা নতুন টাকা না পাওয়ায় প্রচ- ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সূত্র জানায়, ভল্ট থেকে ২ টাকা ও ৫ টাকা মানের ৭ বস্তা নতুন নোট পিকঅ্যাপ ভ্যানে করে বের করে নিয়ে এগুলো গুলিস্তান বা সদরঘাট বা অন্য অঞ্চলের নতুন টাকার ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। এর বিপরীতে সমপরিমাণ পুরনো নোট ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়েছে বলে তারা দাবি করেছে। এটি এখন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ রকম একটি ঘটনা তিনি শুনেছেন। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর প্রকৃত ঘটনা জানানো যাবে। তখন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

ঈদকেন্দ্রিক সাধারণত ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা ও ২০ টাকার নোটের চাহিদা থাকে বেশি। কালোবাজারে ১০০টি ২ টাকার প্রতিটি প্যাকেট ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বেশি দরে বিক্রি হয়। ১০০টি ৫ টাকার প্রতিটি প্যাকেট বিক্রি হয় ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা বেশি দরে। অর্থাৎ প্রতিটি ৫ টাকা বিক্রি হয় সাড়ে ৬ টাকা করে। প্রতিটি ২ টাকা বিক্রি হয় প্রায় তিন টাকা করে। ১০০টি ১০ টাকার প্রতিটি প্যাকেট বিক্রি ৮০ টাকা বেশি দরে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৭ বস্তায় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ছিল। এ টাকা তারা ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা বেশি দরে বিক্রি করেছিল কালোবাজারিদের কাছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে