নিউজ ডেস্ক: বেগম জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচন কালীন সরকার নিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা নিতেই বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঈদের পর থেকে ‘তীব্র গণআন্দোলন’ গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এই আন্দোলন প্রশ্নে বিএনপিতে এখন নানা মত। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অধিকাংশই এখনই বড় আন্দোলনে যাবার ঝুঁকি নিতে চান না।
এক্ষেত্রে তাঁদের আপত্তির প্রধান কারণ হলো গ্রেপ্তার, হয়রানি। তাঁরা মনে করছেন, এরকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেই সরকার নতুন করে গ্রেপ্তার শুরু করবে, তখন আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পরবে। এই নেতারা বলছেন, আন্দোলনের চেয়ে বরং নির্বাচনেই বিএনপির বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার। তাঁদের মতে, এখন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু না করলে পারলে, নির্বাচনেও ভরাডুবি হবে। তবে, বিএনপির, একটি সূত্র বলছে, ভারতসহ আন্তর্জাতিক মহলের মন জয় করতেই বিএনপির শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সম্প্রতি তিন নেতার ভারত সফরে, ভারতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা (বিএনপি) যেন কোনো আন্দোলনে না যায়। ভারত নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক রীতি নীতি গুলো অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিলেই কেবল ভারত বিএনপির অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিটি বিবেচনায় নেবে- এরকম পরিষ্কার গাইডলাইন নিয়েই বিএনপি নেতারা দিল্লি থেকে ফিরেছেন। বলা হচ্ছে, তারেক জিয়াই এই বৈঠকের উদ্যোক্তা। তাঁর নির্দেশেই এই তিন নেতা দিল্লি গিয়েছিলেন।
তবে, বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, বিএনপির বর্তমান নেতারা ভীরু, তাদের যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে। তাই আন্দোলনের ঝুঁকি নিতে তাঁরা ভয় পান। বিএনপির একটি অংশ বলছেন, যারা আন্দোলনে অনাগ্রহী এরা প্রকারান্তে আওয়ামী পন্থী এবং ভারত ঘেঁষা।
শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে আন্দোলনে অনীহা থাকলেও তরুণ ও তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছে তীব্র আন্দোলন। এরা চাইছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি গণআন্দোলনে রূপ দিতে। বিএনপির অধিকাংশ মাঠ পর্যায়ের নেতা মনে করেন, আন্দোলন ছাড়া এই সরকার বেগম জিয়াকে মুক্তি দেবে না, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনও করবে না।
দলের একটি বড় অংশ তখনই বেগম জিয়ার মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জন ছাড়া কোন নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণার পক্ষে। বিএনপির তরুণদের এই অংশ মনে করছে, বেগম জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচন করলে তা হবে আত্মহত্যার শামিল। এ রকম নির্বাচনের ফলে, না হবে বেগম জিয়ার মুক্তি না হবে ক্ষমতার পালাবদল। বিএনপির শীর্ষ মহলেও এই মতের সমর্থক কম নয়। তবে তারা কৌশলগত কারণে এখন নীরব।
এই শীর্ষ নেতারা মনে করেন, বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার, বিএনপির একাংশের ভারতের সঙ্গে দেন-দরবার এবং নির্বাচনে যেতে বিএনপির কারও কারও অতি উৎসাহ – এক সূত্রে গাঁথা। তাঁরা মনে করেন, এটা ভারতের ব্লু-প্রিন্ট। ২০১৪ তে যারা একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছিল, এবার বিএনপিকে অংশগ্রহণ করিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রাখবে। বিএনপিতে এদের বলা হয় পাকিস্তানপন্থী। এরাই একসময় বেগম জিয়ার সবচেয়ে কাছের ছিলেন, কিন্তু, এখন এরা কোণঠাসা।
বিএনপিতে ভারতপন্থী এবং পাকিস্তানপন্থীদের দ্বন্দ্ব এভাবেই এখন প্রকাশ্যে এসেছে। এখন এই লড়াইয়ে কে জেতে, সেটা দেখা যাবে, সামনের দিন গুলোতে বিএনপি কীভাবে এগোয় তার উপর।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার