হামিদ-উজ-জামান: দেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীর গুলশানে নির্মিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ (আন্ডারগ্রাউন্ড) বিদ্যুৎ সাবস্টেশন।
১৩২/৩৩/১১ কেভির ভূগর্ভস্থ গ্রিড উপকেন্দ্রটি নির্মিত হলে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে জনদুর্ভোগ লাঘব করা যাবে।
সংশ্লিষ্টদের আশা, এটি লোডশেডিং কমিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কারিগরি লোকসান কমাতে সহায়ক হবে। উপকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকার ২৪৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে ৬২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) দেবে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এ লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ গুলশানে ১৩২/৩৩/১১ কেভি ভূগর্ভস্থ গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহরাঞ্চলের সাবস্টেশনগুলো ভূগর্ভে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুশাসন দিয়েছিলেন। পরে প্রথম পর্যায়ে গুলশান ও কারওয়ান বাজারে দুটি ভূগর্ভস্থ সাবস্টেশন স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে গুলশানে ভূগর্ভস্থ সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। কারওয়ান বাজারে দ্বিতীয়টি নির্মাণের প্রস্তুতিও রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৪ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল দুটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটি এবং দু’বারের পিইসি সভার সুপারিশের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার প্রকল্পটির অনুমোদন প্রস্তাব একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছরই কাজ শুরু হবে এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডেসকো।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গুলশান এলাকায় বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, লোডশেডিং হ্রাসকরণের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ কমানো এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কারিগরি লস হ্রাসে সহায়ক হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং জমির দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনায় সরকারের সম্মতিতে জাইকা ঢাকা শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড উপকেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণে সমীক্ষা শেষ করেছে।
সেখানে ডেসকোর জন্য গুলশান ও ডিপিডিসির জন্য কারওয়ান বাজারে উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিবেচিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য গত বছরের ১৯ জানুয়ারি ইআরডি, বিদ্যুৎ বিভাগ, ডেসকো, ডিপিডিসি এবং জাইকার মধ্যে যৌথ সভা হয়।
সেখানে ‘মিউনিটস অব ডিসকাশন’ (এমওডি) স্বাক্ষরিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ডেসকোর জন্য ৩৭টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, সিস্টেম লস ৮ শতাংশ কমানো এবং ৪ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।-যুগান্তর