ঢাকা: বিক্রেতা গরুর দাম হাকাচ্ছেন ৩ লাখ টাকা। ক্রেতা বলছেন, ১ লাখ। নিরপেক্ষ জায়গা থেকে বললে, গরুটির বর্তমান বাজারদর কমবেশি ২ লাখ টাকা। ঈদের আগে কোরবানির পশুর হাটে দাম উঠছে এমনই।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরুর এই দরপতন দেখা গেছে। দুই দিন আগে যে গরু ১ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই গরু আজ কেনা যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। হাটে বিক্রেতার আধিক্য থাকলেও ক্রেতা আছেন তুলনামূলক কম।
গরুর এই দাম হ্রাসে বেজায় অখুশি বিক্রেতারা। অনেকে বলছেন, কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে বিক্রি করবেন না। প্রয়োজনে রাতে ট্রাকে করে ফিরে যাবেন খামারে। এমন একজন কুষ্টিয়ার রায়পুরের হাসনাত। মেরাদিয়ার হাটে ১২টি গরু আনলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি।
একটি গরু দেখিয়ে হাসনাত জানান, এই গরুটি এলাকার কসাইয়ের কাছে বিক্রি করলেও কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা দাম পাবেন। ঈদের আগে এত কষ্ট করে হাটে আসার কারণ, একটু লাভ করা। কিন্তু আগের ৫টি গরু বিক্রি করে কাল মোটামুটি লাভ হলেও আজ খরচও উঠছে না।
তিনি জানান, কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে ছাড়বেন না গরু। প্রয়োজনে ফিরে যাবেন কুষ্টিয়া। হাসনাতের দাবি, ভুষি থেকে শুরু করে গরুর খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এজন্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা এটি বুঝতে চান না। আগামীবার হাটে আরো কম গরু নিয়ে আসবেন বলে জানান তিনি।
একই দশা হাটের অন্য বিক্রেতাদেরও। কেউ কেউ ক্রেতার আশায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। ঈদের আগে হাট যেমন জমে ওঠার কথা, এবার এক দিন আগে হাট ঠিক তার উল্টো চরিত্র ধারণ করেছে।
গরুর এই দাম কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খামারি আবদুল করিম ভুইয়া জানান, এবার ভারতের গরু আসবে না- এই খবরে প্রচুর গরু এসেছে হাটে। সোমবার রাতে গরুর দাম থাকার কারণে আরো বেশি পরিমাণে গরু ঢুকেছে হাটে। এ কারণে আজ গরুর দাম উঠছে না।
মেরাদিয়া হাটে অস্ট্রেলিয়ান জাতের সবচেয়ে বড় গরুটি নিয়ে এসেছেন খামারি মঈন উদ্দিন। দাম হাকাচ্ছেন ৪ লাখ টাকা। কিন্তু বাজারদর তাকে আহত করেছে। দাম উঠেছে ২ লাখ টাকা। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গরুটি বিক্রি করবেন না।
আফতাব নগরের হাটে খামারি ফরিদউদ্দিন সিন্দি জাতের ৬টি গরু এনেছেন। এর মধ্যে ৪টি বিক্রি করেছেন। বাকি দুটি বিক্রি করতে পারছেন না। তার ভাষ্য, ক্রেতারা দাম এতটাই কম বলছেন যে, এই দামে গরু বিক্রি করা যাবে না।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় মোট ২৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত করে দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫টি অস্থায়ী হাট ও উত্তরে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটসহ ১০টি হাট চূড়ান্ত করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসিতে মোট ১৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত হয়। এর মধ্যে সাতটি ইজারা ও আটটি খাস বা স্পট ইজারার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়।