নিউজ ডেস্ক: নির্যাতনের চিহ্ন দেখে পুলিশও চমকে উঠেছিল। একটি ছোট শিশুর উপর এভাবে নির্যাতনও কি সম্ভব? এ প্রশ্ন পুলিশ থেকে প্রতিবেশী সকলের। সোমবার রাতে লামিয়া আক্তার মরিয়ম (১০) নামে এক শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় গৃহকর্তীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে গুরুতর জখম ঐ শিশুকে উদ্ধার করে তাকে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মদিনা সড়কের একটি বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার ও গৃহকর্তীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই গৃহকর্তীর স্বামী আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী সটকে পড়েছেন। নির্যাতনের শিকার লামিয়া গৌরনদী থানাধীন বাটাজোরের নোয়াপাড়া এলাকার ইকবাল সরদারের মেয়ে।
মঙ্গলবার এ ঘটনায় নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন রাতে মরিয়মের কান্না আর চিৎকারের বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানিয়ে একটি অভিযোগ দেয় প্রতিবেশীরা। সোমবার রাতে বরিশাল নগরীর কাশীপুর আনসার ক্যাম্পের পেছনে মদিনা সড়কের আকাশ মঞ্জিলে অভিযান চালিয়ে মরিয়মকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
এ সময় পুলিশকে জড়িয়ে ধরে মরিয়ম আর্তনাদ করে বলে, 'ওদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান।'
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০ বছরের শিশু মরিয়ম জানায়, ছয় মাস আগে বাসার কাজের জন্য তাকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়। তারপর প্রথম প্রথম ভালো ব্যবহার করতেন আঁখি-আশরাফুল দম্পতি। কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই কারণে-অকারণে আঁখি ও তার স্বামী, তার ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। বেশিরভাগ সময় বেতের লাঠি ও কাঠের বেলন দিয়ে মারধর করতেন তারা। বাইরে যাতে শব্দ না যায় এ জন্য দরজা বন্ধ করে মারতেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শরীরের ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মরিয়ম। তার শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বেত ও বেলনের আঘাত নেই। চোখের ওপর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, দুই চোখের ওপর-নিচ কালো হয়ে ফুলে গেছে, মাথায় চুল নেই, পুরো শরীর ফুলে উঠেছে তার।
সবশেষে সোমবার রাতে না বলে চিনি খাওয়ার অপরাধে প্রথমে বেত ও বেলন দিয়ে মারধর করে, পরে নখে সুঁই ঢুকিয়ে আমার মাথার চুল কেটে দেয় তারা।
মহানগর ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, একটি উড়ো চিঠির মাধ্যমে আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ আসে। এরপর ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে গৃহকর্ত্রী আঁখিকে আটক করি এবং গৃহকর্মী মরিয়মকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। অভিযানের সংবাদ পেয়ে গৃহকর্তা আশরাফুল পালিয়ে যায়।
এসি নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, মরিয়ম পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে আঁখি ও তার স্বামী আশরাফুলের নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেছে। এ ঘটনায় বরিশাল বিমানবন্দর থানায় ডিবি পুলিশের এসআই ইউনুস আলী বাদী হয়ে আঁখি ও আশরাফুলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
ওই মামলায় আঁখিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার অপর আসামি আঁখির স্বামী আশরাফুলকে গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রেখেছে ডিবি পুলিশ।